কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হওয়ার পর, এই ঘটনার প্রতিবাদে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ও ধর্মঘটের ঢেউ বয়ে গেছে। চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা এখন দাবি করছেন, এই নির্মম হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

কলকাতায় বিক্ষোভ:

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) কলকাতার লেডি হার্ডিঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং আরএমএল হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকরা বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিয়ে সরকারের প্রতি তাদের দাবি জানান। আরএমএল হাসপাতালের ডা. আকাশ জনগণের প্রতি আবেদন জানান যাতে তারা বিপুল সংখ্যায় এসে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করেন এবং ওই চিকিৎসকের জন্য ন্যায়বিচার চান। তিনি জানান, “আমরা চায় যে বাংলায় আমাদের সহকর্মীর জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক, যিনি এই বীভৎস ঘটনার শিকার হয়েছেন।”

পাঞ্জাব, কেরালা ও তামিলনাড়ু:

পাঞ্জাবের অমৃতসরের সরকারি মেডিকেল কলেজের রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন শুক্রবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব অপ্রয়োজনীয় হাসপাতাল পরিষেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। অমৃতসরের গুরু নানক দেব হাসপাতালের সামনে চিকিৎসকরা বিক্ষোভ করছেন।

কেরালা মেডিকেল পোস্টগ্র্যাজুয়েটস অ্যাসোসিয়েশন, শ্রী চিত্রা তিরুনাল ইনস্টিটিউট ফর মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি (এসসিটিআইএমএসটি), আঞ্চলিক ক্যান্সার কেন্দ্র (আরসিসি), ডেন্টাল পিজি অ্যাসোসিয়েশন, হাউস সার্জনস অ্যাসোসিয়েশন এবং বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন রাজ্যটিতে ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। নায়ার হাসপাতাল চত্বরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মেডিকেল, ডেন্টাল ও প্যারামেডিকেল শিক্ষার্থীরা নিরাপদ পরিবেশের দাবিতে মৌন প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন।

তামিলনাড়ুর ত্রিচির মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ত্রিচি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ডা. অরুলেশ্বরন বলেন, “আমরা এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই এবং চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানাই।”

শিলিগুড়ি ও অন্যান্য শহর:

শিলিগুড়িতে সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়ার (কমিউনিস্ট) পক্ষ থেকে ১২ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। এর ফলে শিলিগুড়ির জনজীবন বিঘ্নিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শহরের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।

আরজি কর মেডিকেল কলেজের পরিস্থিতি:

আরজি কর মেডিকেল কলেজে গত ৮ আগস্ট রাতের পর এই নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতায় বিক্ষোভ চলছে। বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) ‘রাত দখল করো’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নামেন। এই কর্মসূচির সময় হাসপাতালের সামনে গুণ্ডাবাহিনী হামলা চালায়। বাঁশ, লাঠি, ছুরি নিয়ে তারা জরুরি বিভাগে ভাঙচুর চালায়।

হামলা ও পুলিশি ভূমিকা:

হামলার সময় পুলিশ হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অক্ষম হয়। নার্সদের অভিযোগ, পুলিশ নিরাপত্তার পরিবর্তে আত্মরক্ষার জন্য হাসপাতালের ভেতর আশ্রয় নিয়েছে। এই হামলা ও পুলিশি গাফিলতির কারণে পুরো পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

বিচারের দাবি:

এই হত্যার প্রতিবাদে কলকাতা হাইকোর্ট পুলিশি ভূমিকার অসন্তোষ প্রকাশ করে সিবিআইকে তদন্তভার দেয়। ফেডারেশন অব রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (ফোরডা) কেন্দ্রীয় সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের দাবি করেছে এবং এই আইন কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ভারতের যৌন সহিংসতার ইতিহাস:

ভারতে নারীদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। ২০২২ সালে, প্রতিদিন গড়ে ৯০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় আইন কার্যকর করার দাবি উঠেছে।

সিসিটিভি ফুটেজ ও তদন্ত:

যুবতীর হত্যার পর সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এই ফুটেজের মাধ্যমে সঞ্জয় রায়কে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই ঘটনার পর পুরো ভারতে বিক্ষোভের তীব্রতা বাড়ছে এবং চিকিৎসকরা আরও কার্যকর নিরাপত্তা আইন দাবি করছেন।