বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষক সেলিম হোসেনের (৪০) হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১০১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলাটি ১৫ আগস্ট রাতে সেলিম হোসেনের বাবা সেকেন্দার আলী বগুড়া সদর থানায় দায়ের করেন। মামলায় শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ জানিয়েছেন, মামলা রেকর্ড করা হয়েছে এবং পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতারে কাজ করছে। বর্তমানে একজন আসামি গ্রেফতার হয়েছেন।
সেলিম হোসেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার পালিকান্দা গ্রামের বাসিন্দা এবং কাহালু উপজেলার মুরইল লাইট হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বগুড়ার সাতমাথায় হামলার শিকার হন। হামলাকারীরা ককটেল ও পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করে এবং তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে বেলা ৩টার দিকে সাতমাথা স্টেশন সড়কে আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। হামলায় সেলিম রক্তাক্ত হন। এরপর বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলররা তাকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে এবং হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। পরে তাকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়।
মামলার আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি টি জামান নিকেতা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম, সাগর কুমার রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদৎ আলম, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খান, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হাসান, জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাজেদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা, সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম, এবং বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় নেতারা।
মামলার আসামিদের মধ্যে:
১. শেখ হাসিনা – আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী
২. ওবায়দুল কাদের – আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
৩. মজিবর রহমান – বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য (বগুড়া-৫)
৪. রাগেবুল আহসান – বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য (বগুড়া-৬)
৫. টি জামান নিকেতা – জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি
৬. মঞ্জুরুল আলম – যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
৭. সাগর কুমার রায় – যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
৮. এ কে এম আসাদুর রহমান – যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
৯. শাহাদৎ আলম – সাংগঠনিক সম্পাদক
১০. রফি নেওয়াজ খান – শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি
১১. ওবায়দুল হাসান – শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
১২. শুভাশীষ পোদ্দার – জেলা যুবলীগের সভাপতি
১৩. আমিনুল ইসলাম – জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক
১৪. সাজেদুর রহমান – জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি
১৫. জুলফিকার রহমান – জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক
১৬. সজীব সাহা – জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি
১৭. আল মাহিদুল ইসলাম – জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক
১৮. আল রাজি জুয়েল – জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি
১৯. নাঈমুর রাজ্জাক – জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি
২০. মাশরাফি হিরো – সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জেলা ছাত্রলীগ
২১. অসীম কুমার রায় – সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জেলা ছাত্রলীগ
২২. আবদুল মান্নান আকন্দ – শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক
২৩. মাসুদুর রহমান – বগুড়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ
২৪. মাফুজুল ইসলাম – চেম্বারের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
২৫. আবু সুফিয়ান – সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি
২৬. মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তা – শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি
২৭. তৌহিদুর রহমান মানিক – শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
২৮. সোহরাব হোসেন ছান্নু – শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান
২৯. আলহাজ শেখ – বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর
৩০. আরিফুর রহমান – বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর
৩১. আমিনুল ইসলাম – বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর
৩২. মেহেদী হাসান – বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর
৩৩. রেজাউল করিম ডাবলু – বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর
৩৪. এম আর ইসলাম রফিক – বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর
৩৫. আবদুল্লাহ আল মামুন ক্যালে – বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর
৩৬. খালেকুজ্জামান রাজা – বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক
৩৭. আসিফ ইকবাল খান – ধুনট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান
৩৮. আনোয়ার হোসেন রানা – নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান
৩৯. আনিসুর রহমান – পুন্ড্র উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান
৪০. ফিরোজ কামাল ফারুক – রায়নগর ইউপি চেয়ারম্যান
৪১. শফিক – মোকামতলা ইউপি চেয়ারম্যান
৪২. সবুজ – রায়নগর ইউপি চেয়ারম্যান
৪৩. জাকারিয়া আদিল – বগুড়া জেলা যুবলীগের দফতর সম্পাদক
৪৪. বেলাল হোসেন – আটমূল ইউপি চেয়ারম্যান
৪৫. শহিদুল ইসলাম শহীদ – শিবগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান
৪৬. নাসিমুল বারী নাছিম – শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি
৪৭. আব্দুর রউফ – সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক
৪৮. আনন্দ চন্দ্র দাস – শহর যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক
এছাড়া, মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। যারা হামলায় অংশগ্রহণ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই মামলায় আরও অনেক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম রয়েছে, যা মামলার তদন্তের মাধ্যমে সঠিকভাবে পর্যালোচনা করা হবে।