কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইকে (কানু) গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় অবশেষে মামলা হয়েছে। আবদুল হাইয়ের পাঠানো লিখিত অভিযোগটি বুধবার রাতে চৌদ্দগ্রাম থানায় মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেছে। আসামি করা হয়েছে ১০ জনের নাম ও অজ্ঞাত ১০-১২ জনের।
এর আগে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জনকে আটক করে পুলিশ। তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে গতকাল মঙ্গলবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনের মধ্যে একজনকে আসামি করা হয়েছে। আর সাক্ষী হিসেবে দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, ১০০ কোটি টাকার মানহানি ও জুতার মালা পরিয়ে মারধরের অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে।
বুধবার রাত আটটার দিকে মামলা রেকর্ডের তথ্য নিশ্চিত করে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আক্তার উজ জামান জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে আসামি করা পাঁচজনের মধ্যে ইসমাইল হোসেন মজুমদার। মামলায় কুলিয়ার গ্রামের (৪৩) আসামি করা হয়েছে। আর বাকি দুজনকে তিনি সাক্ষী হিসেবে গ্রহণ করেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ মামলায় আটকদের মধ্যে কাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে তা নির্ধারণ করা হবে।
নিহত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে ও উপজেলার বাতিসা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া জানান, মঙ্গলবার ফেনী আদালতের সামনে হামলার চেষ্টার পর চৌদ্দগ্রামের ওসি তাকে হোয়াটসঅ্যাপে বক্তব্য পাঠাতে বলেন। . মঙ্গলবার রাতে হোয়াটসঅ্যাপে বিবৃতি পাঠান তিনি। বুধবার চৌদ্দগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধি দল ও স্বজনদের মাধ্যমে মামলার কপি থানায় পাঠানো হয়।
তিনি কাউকে অহেতুক হয়রানি করতে চান না উল্লেখ করে গোলাম মোস্তফা বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত এবং যাদেরকে চেনে তাদের নাম মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। হামলাকারীদের সঙ্গে জামায়াত সমর্থক ইসমাইল হোসেন ছিলেন, যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। জামাল উদ্দিন মজুমদার ও ইলিয়াছ ভূঁইয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো নির্যাতন করেননি। এ জন্য তাদের এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে। বাকি দুজনের ব্যাপারে তারা কিছুই জানে না। এ ঘটনায় জড়িত থাকলে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই বলেন, সেদিন আমাকে মারধর করে। তাদের ভিডিও করেননি। শুধু জুতার ফিতা পরা অবস্থায় একটি ভিডিও করেছেন। এই অপমানের বিচার চাই। মূল অপরাধীদের (জামাত বহিষ্কৃত সমর্থক আবুল হাসেম ও অহিদুর রহমান) এখনো গ্রেফতার হয়নি। অবিলম্বে তাদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আক্তার উজ জামান জানান, আবুল হাসেম ও অহিদুর রহমানসহ আসামিরা পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত রোববার বিকেলে চৌদ্দগ্রামের বটিসা ইউনিয়নের কুলিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইকে গলায় জুতার মালা দিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী সমালোচনা শুরু হয়। পরিবারের অভিযোগ, নির্যাতিতরা সবাই স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতা। উপজেলা জামায়াত নেতারা শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। পরে সোমবার এক বিবৃতিতে অভিযুক্ত দুই সমর্থককে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয় জামায়াত।