সম্প্রতি আটলান্টিক মহাসাগরে জন্ম নেওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘হেলেন’ যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে তাণ্ডব চালিয়েছে। এটি অত্যন্ত শক্তিশালী একটি হারিকেন ছিল, যার ফলে বহু মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে। এই প্রবন্ধে আমরা হারিকেন হেলেনের ক্ষয়ক্ষতি, এর প্রভাব এবং মানুষদের জীবনে এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
হেলেনের আঘাত
হারিকেন হেলেন গত বৃহস্পতিবার রাতে ফ্লোরিডার বিগ বেন্ডে আছড়ে পড়ে। তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪০ মাইল। এই বিধ্বংসী ঝড়ের কারণে বহু গাছপালা উপড়ে গেছে, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে এবং অনেক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি রাস্তা-ঘাটও ডুবে গেছে।
আমেরিকার আবহাওয়া দপ্তর হেলেনকে ‘ক্যাটাগরি ৪’ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ১৪তম এবং প্রশস্ততার দিক থেকে ৩য় স্থানে রয়েছে। হেলেনের আঘাতে ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, টেনেসি, উত্তর ও দক্ষিণ ক্যারোলাইনার বিভিন্ন এলাকায় প্রবল বর্ষণ, ঝড়ো হাওয়া এবং আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
নিহতের সংখ্যা
এই ঝড়ের ফলে অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস জানিয়েছেন, তাঁর রাজ্যে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। জর্জিয়ার গভর্নর ব্রায়ান ক্যাম্প বলছেন, তাঁর রাজ্যে ৫০ জন মারা গেছেন, নিহতদের মধ্যে একজন উদ্ধারকর্মীও আছেন।
বন্যার কারণে জর্জিয়ায় ১৫০টিরও বেশি সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক শহরের অ্যাপার্টমেন্টে হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়েছেন। তাঁদের উদ্ধার করতে মার্কিন সেনাবাহিনীর ন্যাশনাল গার্ডের ১ হাজার সদস্যকে নিয়োজিত করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন
হারিকেন হেলেনের ফলে ফ্লোরিডা এবং জর্জিয়ায় প্রায় ২০ লাখের বেশি ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ফ্লোরিডায় ১২ লাখের বেশি এবং জর্জিয়ায় ৮ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন রয়েছেন।
প্রস্তুতি ও সতর্কতা
হারিকেন হেলেন আঘাত হানার আগেই ফ্লোরিডা রাজ্য সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল। প্রায় ৮ লাখ ৩২ হাজার মানুষকে তালাহাসির আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করা হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষকে আবহাওয়া সতর্কতা জানানো হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা
হারিকেন হেলেনের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছে। যদিও ঝড়টি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, তবে এর প্রভাব এখনও বিদ্যমান।
জর্জিয়ায় ও অন্যান্য রাজ্যে মানুষ এখনও সতর্ক অবস্থায় আছে। ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, এই ঝড়টি এখন টেনেসি ও ক্যারোলাইনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
হারিকেন হেলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের জন্য এক ভীতিকর অভিজ্ঞতা। এর ফলে বহু মানুষের মৃত্যু, ব্যাপক ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যদিও ঝড়টি দুর্বল হয়েছে, তবুও এর ক্ষতি এখনও কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে না। মানুষের মধ্যে সহানুভূতি এবং একতাবদ্ধতা জরুরি, যাতে আমরা একসঙ্গে এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারি।
হারিকেন হেলেনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। প্রশাসন মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।