অভিনব চাঁদাবাজি, পুলিশ ডেকেও রেহাই পায়নি হোটেল মালিক – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



রাজধানীর পল্লবীতে মব সৃষ্টি করে অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজি হয়েছে। ভুক্তভোগী হোটেল মালিক নিরুপায় হয়ে পুলিশ ডেকে আনেন। কিন্তু এরপরও নিস্তার মেলেনি তার। অভিযোগ উঠেছে, উলটো পুলিশের নির্দেশেই গভীর রাতে সাত হাজার টাকা দিয়ে সাময়িক নিস্তার পান হোটেল মালিক।

শুক্রবার রাজধানীর পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ৩ নম্বর বাড়ির নিচতলায় ঘটেছে এ ঘটনা। পল্লবীতে এর আগে মব তৈরি করে আসামি ধরতে বাধাসহ নানা অপতত্পরতা চালিয়েছে এই একই চক্র।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, পল্লবীর ওই বাড়ির নিচতলার এক পাশে ফুটপাত লাগোয়া ছোট্ট খাবারের হোটেল রয়েছে মো. আব্বাসের। ভাতের পাশাপাশি সিঙারা, সমুচা, পুরি বিক্রি হয় সেখানে। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে আব্বাসের হোটেলে নাশতা করেন তিন যুবক। নাশতা শেষে বিল পরিশোধ করে তারা হোটেল ত্যাগ করে। বেলা ১১টার দিকে ওই তিনজনসহ ছয় থেকে সাত যুবক হোটেলটিতে এসে বলেন, নাশতার সময় একটি রেডমি মোবাইল ফোন ভুলে ফেলে গেছেন যার মূল্য ১৬ হাজার টাকা। এ সময় আব্বাস তার দুই কর্মচারীকে নিয়ে হোটেলে খোঁজাখুঁজি করে কোথাও ফোনটি পায় না। তখন আব্বাস বলেন, এখানে কেউ ফোন পায়নি। এ কথা বলার পর তারা চিত্কার-চেচামেচি করে চলে যায়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ৩০ থেকে ৪০ কিশোরকে নিয়ে হোটেলে এসে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোবাইল অথবা এর মূল্য দেওয়ার জন্য আব্বাসকে চাপ দিতে থাকে। এ সময় আব্বাসের স্ত্রী এর প্রতিবাদ করলে তাকে হেনস্তা করে এবং দোকানের কর্মচারী জিসানকে মারপিট করে। একপর্যায়ে হোটেল মালিক আব্বাসকে মোবাইলের অর্ধেক মূল্য বাবদ ৭০০০ টাকা সন্ধ্যার মধ্যে জোগাড় করে রাখতে হুমকি দিয়ে তারা স্থান ত্যাগ করে।

সংশি্লষ্ট সূত্র জানায়, সন্ধ্যায় ফের হোটেলে আসে এই চাঁদাবাজ চক্র। তারা আব্বাসকে বলে তোমার কর্মচারী ফোন নিছে এর দায়িত্ব তোমাকেই নিতে হবে। টাকার জন্য তারা চাপ দিতে থাকে আব্বাসকে। আব্বাস জানান, ফোন আমার কর্মচারী নিয়েছে এর প্রমাণ দেন। কিন্তু কোনো প্রমাণ দিতে না পেরে তারা রাতে টাকা রেডি রাখতে বলে চলে যায়। পরে রাত ৯টার দিকে ফের ১৫-১৬ যুবক টাকার জন্য হোটেলে আসে। তারা নানা ধরনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতে থাকে। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী পুলিশকে খবর দিলে পল্লবী থানার একটি প্যাট্রোল টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে রাত ১১টার দিকে উভয় পক্ষকে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ আব্বাসকে সাত হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয় এবং মোবাইল হারানোর একটি জিডি করতে বলে। মোবাইল যখন পাওয়া যাবে তখন টাকা ফেরত পাবে আব্বাস-এমন কথা বলেন ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবুল কাউম। পরে রাত ১২টার দিকে ৭০০০ টাকা দেন আব্বাস।

হোটেল মালিক আব্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, শুক্রবার সকালে যখন ওই যুবকেরা নাশতা করতে আসে তখন আমি হোটেলে ছিলাম না। তারা হোটেলে মোবাইল ফেলে গেছে এমন কথা বলে মব সৃষ্টি করে অভিনব চাঁদাবাজি করেছে। স্থানীয় সোহেল নামের এক যুবক মবের নেতৃত্ব দেয়। তারা আমার স্ত্রীকে হেনস্তা ও কর্মচারীকে মারধর করেছে। আমার দোকানে অনেকেই অনেক কিছু ফেলে যায় সে গুলো সুন্দর করে রেখে দিই। পরে যার মালামাল সে নিয়ে যায়। কিন্তু ঘটনার দিন ওই যুবকেরা কোনো মোবাইল ফোন হোটেলে ফেলে যায়নি।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি ছোট ব্যবসায়ী। আমার কাছে ৭০০০ টাকা অনেক কিছু। আমি পুলিশকে খবর দিয়েও রেহাই পায়নি। পল্লবী থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবুল কাউম থানার মধ্যে উভয়পক্ষের কথা শুনে আমাকে টাকা দিতে বলে। আমি নিরুপায় হয়ে ওই রাতেই টাকা দিয়েছি।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ইন্সপেক্টর আবুল কাউম বলেন, থানার একটি টহল টিম তাদের নিয়ে এসেছিল। পরে উভয় পক্ষ মিলমিশ করেছে। এখানে আমার কোনো হস্তক্ষেপ নেই।

জানতে চাইলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিউল আলম বলেন, ঘটনার রাতে আমি থানায় ছিলাম না। ১৫ আগস্ট সারাটা দিন রাস্তায় ডিউটি করেছিলাম। ইন্সপেক্টর কাউমকে বিষয়টি সমাধানের জন্য বলেছিলাম। এছাড়া সিনিয়র স্যারেরা এ বিষয়ে অবগত আছেন।

টাকা দেওয়ার নির্দেশের অভিযোগের বিষয়ে ওসি বলেন, পুলিশ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয়নি। টাকার লেনদেনের সঙ্গে ইন্সপেক্টর কাউম সম্পৃক্ত না।

সূত্র : যুগান্তর

  • চাঁদাবাজি
  • পুলিশ
  • হোটেল মালিক
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।