
ছবি : ড. মুহাম্মদ ইউনূস
গত বছরের আগস্টে ব্যাপক গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনার সরকার। এখন দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে থাকা ড. ইউনূস বলছেন, ‘যা কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে, তা গুছিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। আমরা সঠিক পথে এগোচ্ছি। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা আশাবাদী।’
তবে এই আশাবাদ বাস্তবে রূপ দেওয়া সহজ নয়। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নতুন করে গণতন্ত্রের পথে ফিরতে চাইছে। তবে অভুত্থানের ৯ মাস পরও অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় পরিবর্তনের পথ যে পিচ্ছিল, তা স্পষ্ট। ড. ইউনূসের ভাষায়, ১৬ বছর ধরে লাগাতার ভূমিকম্পে কাঁপছে বাংলাদেশ। এই ভূকম্পনের উৎস ছিল শেখ হাসিনা ও তাঁর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ সময়ের একনায়কতান্ত্রিক শাসন।
তবে সব দলের ঐকমত্যে পৌঁছানো এখনো কঠিন কাজ। কেউ কেউ বলছেন, দেশের প্রধান অর্থনৈতিক খাত তৈরি পোশাকশিল্প নিয়ে কোনো কমিশন হয়নি, এটা বড় ঘাটতি। আবার কারও অভিযোগ, শিক্ষা খাতে নজরই দেওয়া হয়নি। সবচেয়ে বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে নারী অধিকার নিয়ে গঠিত কমিশন, যার সুপারিশে ইসলামি উত্তরাধিকার আইনে নারীর অধিকারের প্রসার ঘটানো হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পথে নেমেছে ইসলামপন্থি দলগুলো।
শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর সেপ্টেম্বর থেকেই সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। নির্বাচন, বিচার বিভাগ, সংবিধান সংশোধনসহ নানা খাতে পরামর্শ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কমিশন গঠন করা হয়। এসব কমিশনে জায়গা পান বেসরকারি খাত ও শিক্ষাজগতের বিশেষজ্ঞরা। এ পর্যন্ত ১৬৬টি সুপারিশ জমা পড়েছে।
সবকিছু ঠিক থাকলে ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে পারে। ড. ইউনূস জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের জুনের পর নির্বাচন না হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং তিনি নিজে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে দীর্ঘ এই অন্তর্বর্তী সময়ে কিছু নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে। সরকার বাজার ও ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা আনতে পারলেও প্রবৃদ্ধি এখনো মন্থর। আর রাজনৈতিক অস্থিরতা রয়ে গেছে। এক জরিপ বলছে, প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, সরকার পরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলার তেমন উন্নতি হয়নি। ফলে রাস্তায় বিক্ষোভ এখন নিয়মিত চিত্র।
এসব বিক্ষোভের মূল দাবির একটি—আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ মে নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন স্থগিত করেছে। ফলে তারা কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে শুধু ঘৃণাই নয়, আওয়ামী লীগের প্রতি এখনো একটি নির্দিষ্ট অংশের সমর্থন রয়েছে।
দলটির নেতা মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, আমরা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় ছিলাম। আমাদের সরানো হয়েছে সহিংসভাবে, জেহাদিদের মাধ্যমে। আমরা আমাদের ন্যায্য অবস্থান ফিরে পেতে লড়াই চালিয়ে যাব। এই অবস্থায়, ক্ষমতার বাইরে থেকেও আওয়ামী লীগ যে দেশজুড়ে নাড়া দিতে পারে, তা স্পষ্ট।