আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও রাতে শবে বরাত ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস (ভ্যালেন্টাইনস ডে)। এ বছর একই দিনে রাতে পালিত হবে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র শবে বরাত। একই দিনে দুটি ভিন্ন দিবসকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পাশাপাশি র‍্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা, সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, সাধারণত ভালোবাসা দিবসে বিনোদনকেন্দ্র ও পার্কগুলোতে জনসমাগম বেশি থাকে। অন্যদিকে রাতে কিশোর গ্যাং এবং উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের উৎপাত বাড়ে। এবছর একই দিনে এই দুই উৎসব হওয়ায় রাজধানীবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখতে বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ ঘিরে কড়া নজরদারি

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে শাহবাগ, বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্র তরুণ-তরুণীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। প্রেমিক-প্রেমিকারা লাল শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে হাতে-হাত রেখে ঘুরে বেড়ান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে নানা ধরনের অপরাধ ঘটানোর চেষ্টা করে কিছু অপরাধী চক্র। এদিন যেকোনও ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবেন এবং বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম।

তিনি বলেন, ‘১৪ ফেব্রুয়ারি ঘিরে আমরা ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। শাহবাগ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আশপাশের এলাকায় রেগুলার ডিপ্লয়মেন্টের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে কোনও বিশৃঙ্খলা না হয়।’

শুধু শাহবাগ বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, রমনা পার্ক, চিড়িয়াখানা, হাতিরঝিল, ধোলাইখাল, গুলশান ও বনানীসহ বেশ কয়েকটি এলাকা পুলিশি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। যেকোনও অপরাধ, হয়রানি বা বিশৃঙ্খলা রোধে সাদা পোশাকের পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি) এবং র‍্যাব সদস্যরাও মাঠে থাকবে।

পুলিশের পক্ষ থেকে গণপরিবহন এবং রাইড শেয়ারিং সেবাগুলোতেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, কিছু দুষ্কৃতকারী ভালোবাসা দিবসের দিন যানবাহনের সুযোগ নিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে।

শবে বরাত উপলক্ষে আতশবাজি নিষিদ্ধ, বাড়তি নজরদারি

এবছর ‘ভালোবাসা দিবসের’ রাতেই পালিত হবে পবিত্র শবে বরাত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নফল নামাজ, দোয়া এবং কবর জিয়ারতের মাধ্যমে এই রাতটি পালন করবেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবছরই এই দিনটিকে কেন্দ্র করে কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক আতশবাজি, পটকা ফোটানোসহ নানা ধরনের বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে সংঘটিত করে। এবছর তা ঠেকাতে বাড়তি নজরদারি রাখা হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, শবে বরাতের পবিত্রতা রক্ষা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা মহানগর এলাকায় সকল প্রকার আতশবাজি, পটকা ফোটানো, বিস্ফোরক দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলো।

এই নির্দেশনা কার্যকর করতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ, কবরস্থান এবং প্রধান সড়কগুলোতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।

শবে বরাতের রাতকে কেন্দ্র করে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় কিশোরদের আড্ডা জমে ওঠে। এসব জায়গায় কিশোর অপরাধী চক্রের উৎপাত বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কিশোর গ্যাং ও বিশৃঙ্খলা রোধে বিশেষ অভিযানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস. এন. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত প্রতিটি এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। গোয়েন্দা বাহিনী, থানা পুলিশ এবং র‍্যাব যৌথভাবে কাজ করবে, যাতে কোনও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়।’

দুই উৎসবেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতের আশ্বাস 

শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) একদিকে প্রেমিক-প্রেমিকাদের আনন্দঘন মুহূর্ত, অন্যদিকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য ইবাদতের রাত—এই দুই উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে কঠোর নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ বিষয়ে নগরবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দ্রুত পুলিশকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

‘শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে প্রত্যেক নাগরিকের সহযোগিতা প্রয়োজন’—বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।