
চার দশক পর প্রথমবারের মতো চিকিৎসা কাজে আফিমের বৈধ চাষ শুরু করার পরিকল্পনা করছে ইরান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। আফগানিস্তানে তালেবানের কঠোর মাদকবিরোধী নীতির কারণে বিশ্বে আফিম সরবরাহে তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ কারণেই ইরানে আফিম চাষে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
ইরানের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের মুখপাত্র মোহাম্মদ হাশেমি জানান, দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আফিমের বৈধ চাষ অপরিহার্য। তবে তিনি সতর্ক করেন, যদি নিয়ন্ত্রিত আমদানি বা বৈধ চাষ নিশ্চিত করা না যায়, তবে মরফিন, কোডিন এবং পেথিডিনের মতো জরুরি ওষুধ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে।
প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন। ইরানের মরফিন ও অন্যান্য ওপিওয়েড উৎপাদকেরা এত দিন জব্দকৃত অবৈধ আফগান মাদকের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু ২০২২ সালে তালেবান সরকার আফিম চাষে কড়াকড়ি আরোপ করার পর জব্দকৃত মাদকের পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমে যায়। ২০২১ সালে যেখানে ৭৫০ টন মাদক জব্দ করা হয়েছিল, ২০২৪ সালে তা কমে মাত্র ২০০ টনে দাঁড়িয়েছে।
দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা জানান, ইরানের স্বাস্থ্য খাতে বছরে প্রায় ৫০০ টন আফিম প্রয়োজন। যদিও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরাসরি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে না, তবুও ব্যাংকিং সীমাবদ্ধতার কারণে আমদানিতে জটিলতা দেখা দেয়। তাই দেশেই বৈধ চাষের ব্যবস্থা করাকে একমাত্র সমাধান মনে করছে ইরান। এ জন্য জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মাদক নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের অনুমোদন নেওয়া হবে।
১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর ইরানে আফিম চাষ নিষিদ্ধ হয়। এর আগে শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির আমলে আফিম চাষ বৈধ ছিল। অবশ্য চাষ নিষিদ্ধ হলেও ইরান দীর্ঘদিন ধরে মাদক পাচারের একটি রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। গত চার দশকের বেশি সময় ধরে আফগান আফিম ইরান হয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে।
ইরানে মাদকাসক্তি একটি ব্যাপক সামাজিক সমস্যা। ২০১৫ সালের এক সরকারি জরিপে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষকে নিয়মিত বা বিনোদনমূলক মাদক ব্যবহারকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ২০১০ সালে জাতিসংঘ ইরানকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আফিম ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে ঘোষণা করে।