স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:০৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাংলাদেশের আলেমরা সরকার পরিচালনা করলে দেশে দুর্নীতি ও লুটপাট বিদায় নেবে বলে মন্তব্য করেছেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে নগরীর চকবাজারের প্যারেড মাঠে আয়োজিত তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের সমাপনী দিনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ, চট্টগ্রামের উদ্যেগে পাঁচদিনব্যাপি এ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সমাপনী দিনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত আছেন ইসলামী চিন্তাবিদ ড. মিজানুর রহমান আজহারী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘আলেম যারা, যাদের কোরআনের ওপর পাণ্ডিত্য আছে তারা দেশ চালালে আমাদের এ দেশ, ব্যক্তি, পরিবার সোনার সমাজে পরিণত হবে। আমরা যদি সরকার পরিচালনায় আলেমদের সম্পৃক্ত করতে পারি তাহলে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটের মানসিকতা ও অব্যবস্থাপনা বিদায় নেবে।’
তিনি বলেন, ‘দুনিয়ার সমস্ত মুসলমান এক ও অভিন্ন। যারা কোরআনের ছায়ায় বড় হয়েছে তারা সবাই এক। হতে পারে ভাষা ভিন্ন। মুসলমানদের বিভিন্ন দলে ভাগ করার জন্য চক্রান্ত চলছে। আমাদের এ ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে। যে কোনো মূল্যে আমাদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে।’
বাংলাদেশের মুসলমানদের এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে ২০০ কোটি মুসলমান, ৫৭টি মুসলমানের দেশ আছে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারতাম ইতিহাস নতুনভাবে লেখা হত। বাংলাদেশে ১৮ কোটি মুসলমান। আর ভেদাভেদ বা সংঘাত নয়, মতবিরোধ থাকবে। মতবিরোধ নিয়েই আমরা ঐক্যবদ্ধ হব। বাংলাদেশের বিভিন্ন ধারা আলেম-ওলামারা যদি এক হতে পারে আগামীকাল যে সূর্য উঠবে সেটা হবে নতুন।’
অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ বলেন, ‘আমি ২০১৯ সাল থেকে নয়াদিগন্ত পত্রিকায় মুসলমানদের ঐক্য, কওমী-আলেয়ার ঐক্য নিয়ে নিবন্ধ লিখেছি। এগুলো সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।’
তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের বিভক্ত করে রাখার জন্য চক্রান্ত চলছে। আমাদের সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। শুধুমাত্র ভোটের ঐক্য নয়।’
‘হোক না___ভোটের ঐক্যও হোক। আমরা যদি কাছাকাছি আসতে পারি, এক অপরের ঘরে যেতে পারি, বসতে পারি তাহলে এটাও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমি আশাবাদী। আমরা এ দেশে কোরআনের আদর্শে একটি সমাজ ও রাষ্ট ব্যবস্থা দেখে যাব।’
তিনি বলেন, ‘অতএব আসুন, ফেসবুকে, টুইটারে ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে গুতাগুতি না করে পরস্পরকে সম্মান করতে শিখি। দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করি। যাদের মন ছোট তাদের মাধ্যমে বড় কাজ হয় না। সবাইকে নিয়ে কাজ করার মানসিকতা আমাদের গ্রহণ করতে হবে।’
২০২৬ সালে সমুদ্রপথে হজ্ব পালন করতে হাজীদের পাঠানোর চেষ্টা করবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৬ বছরের জঞ্জাল ছয় মাসে দূর করা যায় না। আমি হাজীদের জন্য সৌদি আরবের বিমান ভাড়া ১ লাখ ৯৭ হাজার থেকে ১ লাখ ৬৭ হাজারে নামিয়ে এনেছি। ওখানে ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসেছি। তারা সাগর দিয়ে জাহাজে হাজী পাঠানোর ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে।’
‘কিন্তু আমাদের জাহাজ নেই। ২০২৬ সালে জাহাজে করে হাজী পাঠানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাব। আমার মন্ত্রণালয়ের কেউ যদি ঘুষ খায়, আমি তাকে সাসপেন্ড করে দেব।’
আ ফ ম খালিদ বলেন, ‘বিগত ১৬ বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে যারা বেচা-বিক্রি ও নয় ছয় করেছে, হাইকোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব আমি। জঞ্জাল একদিনে পরিষ্কার করতে পারব না। তবে পরিষ্কার করা শুরু করেছি।’
আগামী নির্বাচন ঐতিহাসিক হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস সাহেব বলেছেন আগামীতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন হবে আগামীতে। দিনের ভোট রাতে হবে না। দিনের ভোট দিনে হবে। এ দেশের জনগণ যাকে ভালো মনে করে তাকে ভোট দেবে। ভোট নিয়ে কোনো কারচুপি হবে না। কেউ ব্যালট বাক্স চুরি করে নিয়ে গেলে মূহুর্তের মধ্যেই সে সেন্টার আমরা বন্ধ করে দেব।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রয়াত ইসলামী বক্তা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী বলেন, ‘হেলিকপ্টারে করে যারা পালায় তারা চোর। তারা অপরাধী। আল্লামা সাঈদী চুরি করেননি, দুর্নীতি করেননি। ১০ বছর এমপি ছিলেন। একাত্তরের ঝোলা তুলবেন না। রাজাকার এখব বাংলাদেশে রাজকীয় শব্দে পরিণত হয়েছে। আমাদের ভয় দেখাবেন না। জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার কারণেই চারদিনের ব্যবধানে গোটা বাংলাদেশ থেকে আপনারা নিষিদ্ধ হয়ে গেছেন।’
বাংলানিউজবিডিহাব/আইসি/এইচআই
আলেম
চট্টগ্রাম
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন