ইউএসএআইডি-র স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পথে ট্রাম্প

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo

মা‌র্কিন যুক্তরা‌ষ্ট্রের উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড’র স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে একে সরাসরি পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে নেওয়ার পরিকল্পনার পথে রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ছবি: সংগৃহীত

ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি)-এর স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে একে সরাসরি পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের বরাতে জানা গেছে। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সংস্থাটির অফিস থেকে ইউএসএআইডি-এর অফিসিয়াল সিল সম্বলিত ফলক সরিয়ে ফেলা হয়, যা এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরুর ইঙ্গিত দেয়।

এছাড়া ইউএসএআইডি-এর ওয়েবসাইট শনিবার (১ জানুয়ারি) বন্ধ হয়ে গেছে। ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে সংস্থাটিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের অধীনে নেওয়ার পরিকল্পনা চলাকালীন সময়েই ওয়েবসাইটটি বন্ধ হয়েছে।

শনিবার (১ জানুয়ারি) ইউএসএআইডি-এর ওয়েবসাইট অ্যাক্সেসের চেষ্টা করলে সার্ভারের আইপি ঠিকানা পাওয়া যায়নি মেসেজ দেখায়।

সংস্থাটি পররাষ্ট্র দফতরের অধিনস্ত হলে প্রায় ৪২.৮ বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়তে পারে, যা এইচআইভি/এইডস চিকিৎসা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহসহ জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ।

এই পরিবর্তন এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন বৈদেশিক সহায়তার বিতরণ ব্যবস্থা নতুন করে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছে। গত সপ্তাহে প্রশাসন জানিয়েছিল, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সাথে সামঞ্জস্য নিশ্চিত করার জন্য বৈদেশিক সহায়তা পর্যালোচনা করা হবে এবং পর্যালোচনার সময় অর্থায়ন স্থগিত রাখা হবে।

ইউএসএআইডি-এর বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা বলেছেন, সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা প্রশাসনের নীতির বিরোধিতাকারীদের চুপ করানোর একটি কৌশল হতে পারে। সংস্থাটিকে পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে নেওয়া হলে এটি হবে একটি বড় পরিবর্তন, যা বৈশ্বিক মানবিক নীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে দুর্বল করতে পারে।

সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক কণ্ঠস্বর উচ্চপর্যায়ের নীতিগত আলোচনায় আর শোনা যাবে না।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, যিনি ইউএসএআইডি-এর দায়িত্ব নেবেন যদি সংস্থাটি পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে চলে যায়, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এ প্রকাশিত এক মতামত কলামে লিখেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এখন থেকে পশ্চিম গোলার্ধে কূটনীতিতে নতুন করে মনোযোগ দেবে।

রয়টার্স জানিয়েছে, হোয়াইট হাউস ইউএসএআইডি বিলুপ্তির জন্য ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের আইনি বৈধতা খতিয়ে দেখছে এবং এই আদেশটি খুব দ্রুতই সই করা হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইউএসএআইডি পররাষ্ট্র দফতরের অধীনে চলে গেলে এটি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির একটি সরাসরি হাতিয়ারে পরিণত হবে, যেখানে আগে সংস্থাটি স্বাধীনভাবে মানবিক সহায়তা প্রদান করতে পারত।

ইউএসএআইডি অতীতে ইরানের মতো দেশেও সহায়তা দিয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। সংস্থার একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘এই নিরপেক্ষতা অনেক দেশে সহায়তা কার্যক্রম চালানোর সুযোগ তৈরি করেছে, যা পররাষ্ট্রনীতির সরাসরি অংশ হলে সম্ভব হতো না।’

২০২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র ৭২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদান করেছিল, যা বিশ্বব্যাপী মানবিক সহায়তার ৪২ শতাংশ ছিল। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ফলে পররাষ্ট্র দফতর বিশ্বব্যাপী স্টপ-ওয়ার্ক নির্দেশনা জারি করেছে, যার ফলে জরুরি খাদ্য সহায়তা বাদে সব বৈদেশিক সাহায্য স্থগিত রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এই পদক্ষেপকে জীবন ঝুঁকির বলে বর্ণনা করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও অবশ্য জরুরি মানবিক সহায়তার জন্য একটি অতিরিক্ত ছাড়পত্র ঘোষণা করেছেন, তবে তা ৯০ দিনের পর্যালোচনা প্রক্রিয়া চলাকালীন সীমিত পরিসরে কার্যকর থাকবে।

বাংলানিউজবিডিহাব/এনজে

ইউএসএআইডি
ট্রাম্প
পররাষ্ট্র
বাতিল

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।