
ইসলামী ব্যাংকের ফুলতলা শাখায় গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এজেন্ট মালিকের ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে। ব্যাংকের কয়েক কর্মকর্তা ও কর্মচারী ওই ব্যক্তির হাত-পায়ে হাতুড়ি দিয়ে পেটান এবং প্লাস দিয়ে নখ ওঠানোর চেষ্টা করেন বলে পরিবারের অভিযোগ। বর্তমানে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবার নির্যাতন করা হলেও বৃহস্পতিবার ভিডিও ভাইরালের পর ঘটনা জানাজানি হয়।
ব্যাংক কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা জানান, ইসলামী ব্যাংকের ফুলতলা শাখার অধীনে নগরীর ইস্টার্ন গেট এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শাখা রয়েছে। হাজারী এন্টারপ্রাইজ নামের ওই শাখা থেকে গ্রাহকদের প্রায় ৪০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছেন দুই কর্মকর্তা। এজেন্ট শাখার মালিক এ এইচ এম শফিউল্লাহ হাজেরী। সাইফুল্লাহ হাজেরী তাঁর ছেলে। গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়।
বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রক্তমাখা সাদা পায়জামা ও গেঞ্জি পরে কাতরাচ্ছেন সাইফুল্লাহ। তাঁর দুই পায়ে পেটানোর দাগ। সেটা কম্বল দিয়ে ঢেকে রেখেছেন স্বজন। হাতের আঙুলের নখ প্লাস দিয়ে ওঠানোর চেষ্টার কারণে রক্ত জমাট বেঁধেছে।
ভুক্তভোগী সাইফুল্লাহ হাজেরী বলেন, ‘মঙ্গলবার ফুলতলার ইসলামী ব্যাংক শাখায় আমাকে যেতে বলা হয়। বিকেল ৪টার দিকে বাবাকে সঙ্গে নিয়ে যাই। ব্যাংকের কর্মকর্তারা আমাকে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে দোষারোপের চেষ্টা করেন। তাদের বলি, আমরা যদি টাকা আত্মসাৎ করতাম তাহলে এভাবে চলাফেরা করতাম না। তাছাড়া বাবা জমি বেচে দ্রুত এ ক্ষতিপূরণ দেবেন। ইতোমধ্যে আপনারা ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্পে সই নিয়েছেন।’
তখন কর্মকর্তারা বলেন, দ্রুত টাকা পরিশোধ করতে হবে, না হলে সমস্যা। পাশাপাশি তাঁকে সাদা চেকে সই করতে বলেন। তিনি তখন বাবাকে চেক বই আনার জন্য বাড়িতে পাঠান। এই সুযোগে ব্যাংকের এক কর্মকর্তা তাঁর হাত ধরে স্টোর রুমে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর চোখ ও মুখ বেঁধে ফেলে চার-পাঁচজন। এরপর তারা হাতুড়ি দিয়ে পায়ের তালু এবং হাঁটুতে পেটাতে থাকে। পাশাপাশি প্লাস দিয়ে নখ ওঠানোর চেষ্টা করে। এর পর তারা স্ট্যাম্প, চেকসহ সাদা কাগজে তাঁর সই রাখেন।
ভুক্তভোগীর বাবা এ এইচ এম শফিউল্লাহ হাজেরী বলেন, ‘গ্রাহকের টাকা পরিশোধের জন্য আমরা জমি বেচার কাজ শুরু করেছি। ব্যাংকের কথা অনুযায়ী চেক ও স্ট্যাম্পেও সই করেছি। তার পরও ছেলেকে এইভাবে ব্যাংকের ভেতর নির্যাতন করাটা ঠিক হয়নি।’
ইসলামী ব্যাংকের ফুলতলা শাখার ব্যবস্থাপক আনিসুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি ব্যাংকে ছিলাম না। কী হয়েছে এবং কেন হয়েছে, এটা আমি স্পষ্ট জানি না। তবে এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। যে কর্মকর্তা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
ইসলামী ব্যাংক খুলনা জোনের জেনারেল ম্যানেজার ইমামুল বারী বলেন, ‘বিষয়টি আমরা মঙ্গলবার রাতে জেনেছি। হাসপাতালে এবং সংশ্লিষ্ট শাখায় আমাদের লোক পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।’