নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত বৃহস্পতিবার রাতে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এই নতুন সরকারের ১৭ জন সদস্যের মধ্যে ১৪ জন শপথ নিয়েছেন। তিনজন শপথ নিতে পারেননি, কারণ তারা ঢাকার বাইরে ছিলেন।

নতুন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে ১৬ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৪ জন নারী। উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার এবং সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতা স্থান পেয়েছেন।

উপদেষ্টাদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন পেশার মানুষ যেমন: অর্থনীতিবিদ, আইনজীবী, সাবেক কূটনীতিক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী, উন্নয়নকর্মী, আলেম এবং শিক্ষার্থী। এই diverse পেশার প্রতিনিধিরা সরকারকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পরামর্শ দেবেন।

সালেহউদ্দিন আহমেদ
সালেহউদ্দিন আহমেদ

সালেহউদ্দিন আহমেদ

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর এবং বর্তমানে ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক। সালেহউদ্দিন আহমেদ পুরান ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায়।

সালেহউদ্দিন আহমেদ ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৬৩ সালে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে ১৯৬৯ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর, কানাডার ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে একই বছর আরেকটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি চার বছর পর ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটি থেকেই পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর, সালেহউদ্দিন আহমেদ পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, তিনি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও, তিনি সেন্টার অন ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক (সিরডাপ) এর গবেষণাপ্রধান হিসেবে কাজ করেন।

২০০৫ সালের ১ মে থেকে ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর পর তিনি পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে এবং কুমিল্লার বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) এর মহাপরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। সালেহউদ্দিন আহমেদ অর্থনীতি ও ব্যাংকিং নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করে থাকেন।

আসিফ নজরুল
আসিফ নজরুল

আসিফ নজরুল

নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদ পেয়েছেন আসিফ নজরুল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন অভিজ্ঞ অধ্যাপক। আসিফ নজরুল ১৯৬৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (সম্মান) ও এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৯৯ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ থেকে আন্তর্জাতিক আইনে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করার আগে, ১৯৯১ সালে আসিফ নজরুল সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও, তিনি কিছু সময় সরকারি কর্মকর্তা (ম্যাজিস্ট্রেট) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

আসিফ নজরুল একজন জনপ্রিয় কলামিস্ট ও মানবাধিকারকর্মী। তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের লেখক, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল “সংবিধান বিতর্ক ১৯৭২: গণপরিষদের রাষ্ট্রভাবনা” যা প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত এবং “শেয়ারিং গঙ্গাস ওয়াটার: ইন্দো-বাংলাদেশ ট্রিটিস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ল” যা ইউনিভার্সিটি প্রেস লি. (ইউপিএল) থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক জার্নাল ও বইয়ে সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক আইনি বিষয় নিয়ে বহু গবেষণাপত্রও লিখেছেন।

২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আসিফ নজরুল সাউথ এশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস (SAHR) এর ব্যুরোর সদস্য ছিলেন। তিনি সুশাসন, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকার বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থার পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন, যেমন ইইউ ডেলিগেশন ইন বাংলাদেশ, ইউএনডিপি, এডিবি, ডিএএনআইডিএ, এসআইডিএ, কেয়ার এবং টিআইবি।

আদিলুর রহমান খান
আদিলুর রহমান খান

আদিলুর রহমান খান

নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত হয়েছেন আদিলুর রহমান খান। তিনি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের একজন প্রখ্যাত আইনজীবী এবং মানবাধিকারকর্মী হিসেবে পরিচিত।

আদিলুর রহমান খান ১৯৯৪ সালে নাগরিক সমাজের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে মিলে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং বর্তমানে তার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের বিষয়ে ‘অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রচারের’ অভিযোগে আদিলুর রহমান খান ও তাঁর সহকর্মী, অধিকার সংস্থার পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এই মামলায় তাঁদের ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে, তাঁরা অক্টোবরে জামিনে মুক্তি পান। এছাড়া, ২০২২ সালে সরকার ‘অধিকার’ এর নিবন্ধন বাতিল করে।

আদিলুর রহমান খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেছেন এবং তিনি স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।

বিএনপি সরকারের শেষ মেয়াদে, আদিলুর রহমান খান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এ এফ হাসান আরিফ
এ এফ হাসান আরিফ

এ এফ হাসান আরিফ

এ এফ হাসান আরিফ একজন প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তিনি ১৯৭০ সাল থেকে আইন পেশার সাথে যুক্ত আছেন এবং এই সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া, ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন।

হাসান আরিফ তাঁর আইনজীবী জীবনের শুরু করেন ১৯৬৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টে। এরপর ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন এবং ঢাকার হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কার্যক্রম শুরু করেন। তার ক্যারিয়ারে, তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

এম তৌহিদ হোসেন
এম তৌহিদ হোসেন

এম তৌহিদ হোসেন

এম তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব। তার জন্ম ১৯৫৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ১৯৮১ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পর, তিনি বাংলাদেশের কূটনৈতিক সেবা শুরু করেন।

১৯৯৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ফরেন সার্ভিস একাডেমির প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে, ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার হিসেবে কাজ করেন। ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্রসচিবের পদে কর্মরত ছিলেন।

২০১২ সালের জুনে, এম তৌহিদ হোসেন দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার নিযুক্ত হন। তিনি আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখি করেন এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তার লেখা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো “১৯৭১-২০২১: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর,” যা প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

পরিবেশ রক্ষার জন্য সুপরিচিত কাজ করা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি একজন অভিজ্ঞ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং পরিবেশবিষয়ক সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর প্রধান নির্বাহী।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দেশের পরিবেশগত বিভিন্ন ইস্যুতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন এবং পরিবেশ সংক্রান্ত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য ২০২১ সালে ‘এশিয়ার নোবেল’ হিসেবে পরিচিত র‍্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার লাভ করেন। টাইম ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের ‘৪০ পরিবেশবিষয়ক হিরো’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

তিনি দেশের একাধিক বেসরকারি সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদেও সক্রিয় সদস্য। এসব সংগঠনের মধ্যে রয়েছে এফআইভিডিবি, নিজেরা করি, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্মস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ব্র্যাক।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের জন্ম ১৯৬৮ সালের ১৫ জানুয়ারি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং ১৯৯৩ সালে বেলায় কর্মজীবন শুরু করেন।

শারমিন এস মুরশিদ
শারমিন এস মুরশিদ

শারমিন এস মুরশিদ

শারমিন এস মুরশিদ একজন প্রখ্যাত নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। তিনি নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘ব্রতী’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পাশাপাশি মুক্ত গণতন্ত্র এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালীকরণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন।

শারমিন মুরশিদের বাবা খান সারওয়ার মুরশিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সম্মানিত শিক্ষক ছিলেন। তিনি একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কূটনীতিক এবং বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

তার মা নূরজাহান মুরশিদ ছিলেন একজন সাংবাদিক, শিক্ষক এবং সমাজকর্মী। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

শারমিন মুরশিদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ‘উত্তরসূরী’র মহাসচিব হিসেবেও কাজ করছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়, ১৯৭১ সালে, তিনি বাংলাদেশ ‘মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’র সদস্য ছিলেন। এই সাংস্কৃতিক দল মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের মনোবল বাড়াতে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করতো। তারা শরণার্থী শিবির এবং মুক্তাঞ্চলে মঞ্চনাটক, পাপেট শো আয়োজন করতো। ১৯৯৫ সালে, এই সাংস্কৃতিক দলের কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে ‘মুক্তির গান’ নামে একটি প্রখ্যাত তথ্যচিত্র নির্মিত হয়।

আ ফ ম খালিদ হোসেন
আ ফ ম খালিদ হোসেন

এম সাখাওয়াত হোসেন

নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত হয়েছেন এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বাংলাদেশের সাবেক নির্বাচন কমিশনার এবং তার জন্ম ১৯৪৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বরিশালে।

১৯৬৬ সালে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং পরবর্তীতে প্রায় দুই বছর পাকিস্তানের বন্দিশিবিরে কাটান। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

সাখাওয়াত হোসেন ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ৪৬ ব্রিগেডে স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সেনা সদরে অপারেশন ডিরেক্টরেটের দায়িত্বে ছিলেন। পরে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে দুটি ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড ও একটি আর্টিলারি ব্রিগেডের অধিনায়ক হিসেবে কাজ করেন। তিনি ইউএস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পাকিস্তান ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ থেকে স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এম সাখাওয়াত হোসেন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি) এর জ্যেষ্ঠ ফেলো হিসেবে কাজ করছেন। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

এম সাখাওয়াত হোসেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি প্রতিরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে নিয়মিত পত্রিকায় নিবন্ধ লেখেন এবং তার লেখা বইয়ের মধ্যে অন্যতম হলো “রক্তাক্ত দিনগুলি: ১৯৭৫-৮১: অভ্যুত্থান-পাল্টাঅভ্যুত্থান: প্রত্যক্ষদর্শীর অভিজ্ঞতা,” যা প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

ফরিদা আখতার
ফরিদা আখতার

ফরিদা আখতার

ফরিদা আখতার নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি একজন সুপরিচিত অধিকারকর্মী এবং নারী অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। বিশেষ করে ১৯৮০-এর দশক থেকে তিনি নারী অধিকার নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেন।

তিনি উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা জৈব কৃষি ও প্রাণবৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা এবং বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করে।

ফরিদা আখতার নারী গ্রন্থ প্রবর্তনা নামক একটি প্রকাশনা সংস্থার প্রধান। ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরে ১৪ বছরের কিশোরী ইয়াসমিন আক্তার ধর্ষণ ও হত্যা হওয়ার পর, ফরিদা আখতার ব্যাপক প্রতিবাদে অংশ নেন। এই ঘটনায় বেশ কিছু পুলিশ সদস্য জড়িত ছিলেন এবং এটি দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

ফরিদা আখতার ১৯৫৩ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তার লেখা প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে “নারী ও গাছ” এবং “কৈজুরী গ্রামের নারী ও গাছের কথা,” যা নারী ও পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গভীর অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ প্রদান করে।

নুরজাহান বেগম

নুরজাহান বেগম

১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রথম সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নুরজাহান বেগম। তখন তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক ও চ্যালেঞ্জের দিনগুলোতে, নুরজাহান বেগম গ্রামীণ নারীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সেই সময়ে গ্রামীণ নারীদের বাড়ির বাইরে যাওয়া, পরপুরুষদের সঙ্গে কথা বলা, এবং ঋণ নেওয়ার মতো সুযোগ ছিল না।

এক দশকের বেশি সময় ধরে নুরজাহান বেগম চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, রংপুর এবং পটুয়াখালীতে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রোগ্রাম অফিসার ও ট্রেনিং অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

গ্রামীণ ব্যাংকের নোবেল পুরস্কার বিজয়ের পর, নুরজাহান বেগম সংস্থার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করেন এবং ২০১১ সালে ড. ইউনূস অবসর নেওয়ার পর তিনি ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এছাড়া, তিনি গ্রামীণ শিক্ষার সম্মানিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং গ্রামীণের বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালক হিসেবেও কাজ করছেন।

নুরজাহান বেগম তার কর্মজীবনে অসাধারণ অবদানের জন্য ২০০৮ সালে গ্রামীণ ফাউন্ডেশনের সুসান এম ডেভিস লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, ২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ড সামিট মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস অ্যাওয়ার্ড এবং একই বছরে ভিশন অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

মো. নাহিদ ইসলাম

মো. নাহিদ ইসলাম

মো. নাহিদ ইসলাম কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয়ক। এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম তরুণ উপদেষ্টা। তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সদস্যসচিব। নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে বেরিয়ে আসা সদস্যরা এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন।

আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নাহিদকে গ্রেপ্তার করে এবং অচেতন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠে। ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতা বাড়লে পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা তাকে আবারও আটক করেন, পাশাপাশি আরও পাঁচজন সমন্বয়ককে গ্রেপ্তার করা হয়।

২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে নাহিদ ইসলাম সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এই বিক্ষোভ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আলোড়ন সৃষ্টি করে। সে সময় নাহিদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে হুমকির মুখে পড়েছিলেন।

২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে নুরুল হক নুর, রাশেদ খান, ও ফারুক আহমেদ প্যানেলের হয়ে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নাহিদ। তবে নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেননি। পরবর্তীতে তিনি ওই পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন।

নাহিদ ইসলাম ২০১৬–২০১৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখানে সমাজবিজ্ঞানে পড়াশোনা করছেন।

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন এবং অন্য পাঁচজন সমন্বয়কের সঙ্গে তাঁকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) আটক করে কিছুদিন হেফাজতে রেখেছিল।

২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে আসিফ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ২০২৩ সালে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রথম সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলে, আসিফ পাঁচ মাস পর পদত্যাগ করেন।

পরবর্তীতে, ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর, আসিফ নতুন ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আসিফ মাহমুদ ১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন।

এখনো শপথ নেননি তিন উপদেষ্টা

সুপ্রদীপ চাকমা

সুপ্রদীপ চাকমা

সুপ্রদীপ চাকমা, একজন প্রখ্যাত সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং সচিব, ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৫ সালের বিসিএস ব্যাচের পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তা ছিলেন। দীর্ঘ সরকারি চাকরির পর, সর্বশেষ ২০২১ সালে মেক্সিকোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার বাসিন্দা সুপ্রদীপ চাকমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে ১৯৮২ সালে স্নাতক এবং ১৯৮৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

তার কর্মজীবনে মরক্কো, শ্রীলঙ্কা, বেলজিয়াম ও তুরস্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর, সুপ্রদীপ চাকমা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যাপক অভিজ্ঞতা অর্জনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত হন।

পারিবারিক জীবনে সুপ্রদীপ চাকমা এবং তার স্ত্রী নন্দিতা চাকমার দুটি সন্তান রয়েছে।

বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার
বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার

বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার

বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার একজন খ্যাতনামা মনোরোগবিশেষজ্ঞ। তিনি ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন এবং বর্তমানে ময়মনসিংহে মনোরোগ চিকিৎসার অনুশীলন করছেন।

১৯৬৪ সালে সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।

২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সাইকিয়াট্রি বিভাগের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি প্রতিষ্ঠানটির মানোন্নয়ন এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে চিকিৎসা প্রদান করছেন, এবং তাঁর বিশদ অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার জন্য পরিচিত।

ফারুক-ই-আজম

ফারুক-ই-আজম

ফারুক-ই-আজম মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বীর প্রতীক খেতাব লাভ করেন। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ নৌ কমান্ডো।

ফারুক-ই-আজম চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে, তিনি ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর সাব-কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই অভিযানটি চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পরিচালিত সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনগুলোর একটি।

১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট বন্দরে আক্রমণের জন্য তিনটি আলাদা দল পাঠানো হয়েছিল। একটি দল চট্টগ্রামে পৌঁছাতে না পারলেও, ৩৭ জন সদস্যসহ দুইটি দল সফলভাবে আক্রমণে অংশগ্রহণ করে। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন এ ডব্লিউ চৌধুরী।

১৯৭১ সালে ফারুক-ই-আজম তাঁর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করার পর মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভিক সময়ে খুলনায় ছিলেন। যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তিনি চট্টগ্রামে আসেন। সীমান্ত পেরিয়ে ৬ মে তিনি ভারতের হরিণা যুব ক্যাম্পে আশ্রয় নেন এবং সেখানে নৌবাহিনীতে ভর্তি হন। দুই মাস প্রশিক্ষণ শেষে, তাঁকে ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর জন্য নির্বাচিত করা হয়।

ফারুক-ই-আজম ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামে প্রথম বিজয় মেলার অন্যতম সংগঠক হিসেবে কাজ করেন এবং পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।