
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আরও পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁদের মধ্যে তিনজন এনবিআরের সাম্প্রতিক ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন। এ নিয়ে দুই দিনে এনবিআরের মোট ১১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এরই অংশ হিসেবে গত ২৮ জুন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা এই কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম বন্দর, ঢাকা কাস্টম হাউস, আখাউড়া, বেনাপোলসহ দেশের সব স্থলবন্দরে শুল্ক-কর আদায় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
এই অচলাবস্থা কাটাতে গত রোববার আন্দোলনরত এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে ফেরার আহ্বান জানায় অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে এক বিবৃতিতে এনবিআরের আওতাধীন সব কাস্টম হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট ও শুল্ক স্টেশনগুলোর সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা (এসেনশিয়াল সার্ভিস) ঘোষণা করা হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে সেদিনই বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) তেজগাঁও কার্যালয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।
এই ঘোষণার পরদিন গতকাল সোমবার এনবিআরের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের কথা জানায় সংস্থাটি। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনই ওই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
আজ নতুন করে অনুসন্ধানে আসা পাঁচ কর্মকর্তা হলেন এনবিআরের অতিরিক্ত কমিশনার ও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সদস্য আব্দুল রশীদ মিয়া, সদস্য লুতফুল আজীম, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, উপ-কর কমিশনার ও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম এবং যুগ্ম কমিশনার ও ঐক্য পরিষদের সদস্য মো. তারেক হাসান।
অভিযোগের বিষয়ে দুদকের নথিতে বলা হয়, এই পাঁচ কর্মকর্তা কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহণের বিনিময়ে কর ফাঁকির সুযোগ করে দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তারা করদাতাদের প্রকৃত কর নির্ধারণ না করে কম কর আদায় করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।
এই দুর্নীতির কারণে সরকার প্রতিবছর বিপুল রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়। কিছু ক্ষেত্রে কর কর্মকর্তারা ঘুষ না পেলে মিথ্যা মামলা দিয়ে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করতেন বলেও নথিতে উল্লেখ করা হয়।