থাইল্যান্ডের ছোট্ট একটা শহর থেকে উঠে এসে পুরো বিশ্বে তার নাম ছড়িয়ে দিয়েছেন লিসা। ব্ল্যাকপিঙ্ক ব্যান্ডের সদস্য হয়ে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পেয়েছেন তিনি, তবে একক ক্যারিয়ারে তার অর্জনও কম নয়। সম্প্রতি তিনি এমটিভি ইউরোপ মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসে দুটি সম্মাননা পেয়েছেন, যা আবারও প্রমাণ করেছে তার অসাধারণ প্রতিভা। লিসা শুধু একজন পপ তারকা নন, তিনি পুরো এশিয়া থেকে ইউরোপ—সবখানেই সাফল্য অর্জন করছেন।

লিসা, যার পুরো নাম লালিসা মানোবান, থাইল্যান্ডের একটি সাধারণ পরিবার থেকে আসা এক তরুণী। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি দক্ষিণ কোরিয়াতে আসেন, এবং তার পরের গল্পটি যেন সবার কাছে এক অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় এসে তিনি কোরীয় ব্যান্ড ব্ল্যাকপিঙ্কে যোগ দেন এবং খুব দ্রুত সবার নজর কাড়েন তার প্রতিভা দিয়ে। আজ তিনি শুধু ব্ল্যাকপিঙ্কের সদস্য হিসেবে নয়, একক শিল্পী হিসেবেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন।

গত ১০ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে এমটিভি ইউরোপ মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (EMA) অনুষ্ঠানে লিসা দুটি পুরস্কার জিতেছেন। এই পুরস্কারের মধ্যে একটি ছিল ‘নিউ উইমেন’ গানের জন্য সেরা কোলাবোরেশন, আরেকটি ছিল ‘বিগেস্ট ফ্যানস’ পুরস্কার। তার সঙ্গে এই গানটিতে কোলাবোরেশন করেছেন স্প্যানিশ গায়িকা রোসালিয়া। এই গানের জন্য শ্রোতারা খুবই উচ্ছ্বসিত ছিলেন, এবং গানটি মুক্তির পর খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

এই পুরস্কার জয় লিসার জন্য কোনো নতুন ঘটনা নয়। এর আগে, ২০২৪ সালের ২৮ জুন, তিনি ‘রকস্টার’ শিরোনামে আরেকটি গান প্রকাশ করেন। গানটি খুব তাড়াতাড়ি শ্রোতাদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসে (VMA) ‘সেরা কে-পপ’ শিল্পী হিসেবে পুরস্কৃত হন। এর আগেও তিনি সাতটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অর্জন করেছেন, যা তার অসীম প্রতিভা এবং জনপ্রিয়তার আরও এক প্রমাণ।

লিসা যখন ব্ল্যাকপিঙ্কে যোগ দিয়েছিলেন, তখন মাত্র ১৬ বছর বয়সী একজন তরুণী ছিলেন। কিন্তু তার ভেতর ছিল অবিশ্বাস্য শক্তি ও প্রতিভা, যা তাকে এক মুহূর্তে সবার সামনে এনে দাঁড় করায়। দক্ষিণ কোরিয়ায় এসে গান, নাচ, র‍্যাপ—সবকিছুতেই অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শন করতে থাকেন তিনি। তার অঙ্গভঙ্গি, স্টাইল এবং পারফরম্যান্স ছিল একেবারে আলাদা, যা তাকে অন্য সবার থেকে বিশেষ করে তুলেছিল।

ব্ল্যাকপিঙ্কের সঙ্গে লিসা অনেক বড় বড় সাফল্য অর্জন করেছে। তাদের গানগুলো যেমন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়, তেমনি তাদের স্টাইলও তরুণদের মধ্যে একটি ট্রেন্ড তৈরি করেছে। তবে লিসা শুধু ব্যান্ডের সদস্য হিসেবেই পরিচিত নন, তিনি এখন একক শিল্পী হিসেবেও অনেক বড় নাম। তার একক গানে তিনি যে সাফল্য পেয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।

লিসার ক্যারিয়ার শুধু গান বা মিউজিক ভিডিওতেই সীমাবদ্ধ নেই। তিনি ফ্যাশন আইকন হিসেবেও বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তার পোশাকের শৈলী এবং লুক সব সময়ই তরুণদের মধ্যে ট্রেন্ড তৈরি করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের অ্যাড ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করেন তিনি, যা তাকে আরও জনপ্রিয় করেছে। তার স্টাইল আর ব্যক্তিত্বকে সবাই অত্যন্ত পছন্দ করে, আর তাই তাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফ্যাশন আইকনদের মধ্যে গণ্য করা হয়।

এমন একজন মেয়ে, যিনি থাইল্যান্ডের সাধারণ একটা পরিবার থেকে উঠে এসেছেন, আজ তিনি কোরিয়ার জনপ্রিয় ব্যান্ড ব্ল্যাকপিঙ্কের সদস্য, একক গায়িকা, এবং বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী তারকা। তার সাফল্যের গল্প আমাদের শেখায় যে, কঠোর পরিশ্রম, প্রতিভা এবং আত্মবিশ্বাসই মানুষকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যেতে পারে।

লিসার কাছে আরও অনেক কিছুই অর্জন করার বাকি। তার ক্যারিয়ার একেবারে শুরুর দিকে রয়েছে, এবং প্রতিদিন নতুন কিছু অর্জন করছে। তার অনুরাগীরা, যারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছেন, তারা তার গান, নাচ এবং পারফরম্যান্সের জন্য অপেক্ষা করেন। লিসার প্রতি তাদের ভালোবাসা কোনো বাধাই মানে না। এমনকি তাকে ‘ব্ল্যাকপিঙ্কের সবচেয়ে বড় তারকা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও, তিনি মাটিতে পা রেখে কাজ করে যাচ্ছেন, এবং আরও বড় কিছু অর্জন করার জন্য প্রস্তুত।

লিসার কাহিনি শুধু তার সাফল্য বা পুরস্কারের গল্প নয়, এটি আমাদের শেখায় যে, সঠিক সময়, কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাস দিয়ে আমরা নিজেদের স্বপ্ন পূর্ণ করতে পারি। তার গল্প আমাদের প্রমাণ দেয় যে, যেকোনো প্রতিবন্ধকতাকে পেরিয়ে আমরা নিজের স্থান তৈরি করতে পারি, ঠিক যেমনটা লিসা করেছেন।