
রাজশাহীতে কিস্তি দিতে না পারায় রুরাল রিকনস্ট্রাকশন ফাউন্ডেশন (আরআরএফ) নামে একটি এনজিওর কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জহুরুল ইসলাম (৫৫) নামে এক ঋণগ্রহীতাকে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ওই ঋণগ্রহীতাকে এনজিও কর্মচারী-কর্মকর্তারা আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছেন বলে তার নিকটাত্মীয়দের দাবি।
নির্যাতন সইতে না পেরে ওই এনজিওর কার্যালয়ের ভেতরেই জহুরুল বিষপান করেন। গত ২৯ এপ্রিল দুপুরে জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে আরআরএফ কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। জহুরুলের বাড়ি জেলার পুঠিয়া উপজেলার বিড়ালদহ নয়াপাড়া গ্রামে।
এদিকে বিষপানে জহুরুলের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে এনজিওর কয়েকজন কর্মকর্তা তাকে কার্যালয়সংলগ্ন রাস্তায় ফেলে আসেন। খবর পেয়ে জহুরুলের নিকটাত্মীয়রা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এরপর তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করেন। হাসপাতালে জহুরুল এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। ওয়ার্ডের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বলছেন, জহুরুলের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় দায়িত্বরত একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক জানান, জহুরুল যা পান করেছেন তা প্যারাকোয়াট গ্রুপের ঘাস (আগাছা) মারার বিষ। এই রোগীর ক্ষেত্রে যে কোনো সময় খারাপ কিছু ঘটতে পারে।
জহুরুলের মেয়ে শাহিদা বলেন, তার বাবা কোয়েল পাখির ব্যবসা করেন। এক বছর আগে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ছেলে নাহিদকে মালয়েশিয়া পাঠান। সেই টাকা শোধ করতে আরআরএফ থেকে ৩ লাখ টাকা ঋণ নেন। মাসিক কিস্তি প্রায় ৩০ হাজার টাকা। প্রতি মাসে নাহিদ টাকা পাঠালে জহুরুল কিস্তি দিতেন। এভাবে চারটি কিস্তি দিয়েছেন। দুর্ঘটনায় পড়ে গত মাস থেকে টাকা পাঠাতে পারেনি নাহিদ। বাবা জহুরুলও কিস্তি দিতে পারেননি।
সোমবার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে অস্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলেন জহুরুল ইসলাম। জানান, চাপের কারণে তিনি বিষপান করেছেন। কারা চাপ দিয়েছেন-জানতে চাইলে বলেন, দুজন স্টাফ-একজন মার্জিয়া, অপরজন রউফ। দুই দিন সময় চেয়েছি, দেয়নি। মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছি, সেখানে গিয়েও তারা চাপ দিয়েছে। বলেছে, মরে গেলেও কিস্তির টাকা দিতে হবে। আমি সহ্য করতে পারিনি। অফিসে গেছি, আমাকে গ্রাহ্য করেনি।
হাসপাতালে ছিলেন জহুরুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা বেগম ও মেয়ে শাহিদা খাতুন। সম্প্রতি রাজশাহী মহানগরীর বিনোদপুর এলাকায় শাহিদার বিয়ে হয়েছে। গত ২৯ এপ্রিল সকালে আরআরএফের ক্রেডিট অফিসার (সিও) আব্দুর রউফ এবং মার্জিয়া খাতুন শাহিদার শ্বশুরবাড়িতে গিয়েই তার বাবা জহুরুল ইসলামকে পান। কিস্তি না দেওয়ার কারণে সেখানে তাকে নানা অপমানজনক কথা বলেন। মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে অপমানিত হওয়ার পর জহুরুল বানেশ্বরে আরআরএফের অফিসে আসেন। দুপুর ১২টার দিকে সেই অফিসের ভেতরেই বিষপান করেন তিনি।
রোববার দুপুরে বানেশ্বরে আরআরএফ অফিসে গিয়ে আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক অজয় বিশ্বাস ও শাখা ব্যবস্থাপক সুশীল কুমার দাসকে পাওয়া যায়। তবে তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি।
আরআরএফের প্রধান কার্যালয় যশোরে যোগাযোগ করা হলে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফিলিপ বিশ্বাস বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে খুব খারাপ, অপ্রত্যাশিত। আমি খোঁজ নেব। এজন্য আমাদের প্রতিষ্ঠানের কেউ দায়ী থাকলে অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে পুঠিয়া থানার ওসি কবির হোসেন বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের কিছু করণীয় নেই। জহুরুল যদি মারা যান আমরা ব্যবস্থা নেব। এনজিওর কার্যক্রম নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে দেখব।
সূত্র : যুগান্তর