স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৫৯ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৪৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ভিশন-মিশনের ভিত্তিতে নয় বরং বাংলাদেশের জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই সংস্কার হবে বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। অমর একুশে বইমেলা মঞ্চে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যেগে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসুর মাহমুদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির ভিশন বা কোনো গোষ্ঠীর মিশনের ভিত্তিতে সংস্কার হবে না। বাংলাদেশের জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই সংস্কার হবে। ৩১ দফার জন্য আমাদের জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণ যখন এসব দফার প্রতি সমর্থন জানিয়ে ভোট দেবে, তখন আমরা এটা বাস্তবায়ন করতে পারব।’
বর্তমানে যারা সংস্কারের কথা বলছে তাদের কারও জনগণের সমর্থন নেই জানিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘এখন যারা সংস্কারের কথা বলেন, তাদের কাছে কোনো ম্যান্ডেট আছে? তাদের পক্ষে কার সমর্থন আছে? তাদের কে বলেছে? হ্যাঁ, প্রণয়ন করুন, কমিশন হয়েছে— ভালো কথা। এগুলো সব আমরা আগামী সংসদে প্রস্তাব আকারে উপস্থাপন করব। আপনারা কষ্ট করে করেছেন, অনেক ধন্যবাদ। এগুলো আমরা আগামী সংসদে পেশ করব। ৩১ দফা সংসদে আলোচনা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি, হয়ে যাবে— তা নয়, সংসদে আলোচনা হবে। অন্য কোনো দলের যদি কোনো প্রস্তাব থাকে, সেটাও সংসদে উপস্থাপন করুক। কারণ, আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চাই। জনগণের চিন্তার প্রতিফলন রাষ্ট্র পরিচালনায় ও দৈনন্দিন জীবনে ঘটতে হবে।’
৩১ দফা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে আমীর খসরু বলেন, ‘সংস্কারের গল্প আমাদেরকে বলার দরকার নেই। এ গল্প যারা নতুন নতুন সংস্কার শিখেছে, তাদের মধ্যে আর আপনাদের মধ্যে রেখে দিন। ৩১ দফা সংস্কার আকাশ থেকে পড়েনি। এটা প্রণয়নের পেছনে অনেক বিতর্ক, আলোচনা ও প্রস্তাবনা এসেছে। সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতেই আমরা ৩১ দফা প্রণয়ন করেছি। বাংলাদেশের মানুষের আগামী দিনের পরিবর্তনের বার্তা এ ৩১ দফার মাধ্যমেই দেওয়া হয়েছে। এ বার্তা নিয়ে আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছি এবং সংস্কারের জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বইমেলা জিনিসটা আমি ভুলে গিয়েছি। কারণ, বিগত দিনে বইমেলা বলতে যা বোঝানো হতো, তা হলো— একটি দলের প্রতিষ্ঠাতা, তার মেয়ে, তার পরিবার— তাদের চিন্তা-ভাবনা ও দর্শন প্রতিফলিত হতো সেই বইমেলায়। এমনকি স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও তাদের পরিবারের দর্শন ও চিন্তা-ভাবনা কারিকুলামের মাধ্যমে পড়তে, শিখতে বাধ্য করা হয়েছে। কোনো বিশেষ দর্শন, চিন্তা বা পরিবার যেন বাংলাদেশের মনোজগতে এককভাবে প্রবেশ করতে না পারে, সেটা আমরা আগামী দিনে নিশ্চিত করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি আবার তাদের পথে চলি, তাহলে যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জিয়াউর রহমান দেখে গিয়েছেন, সেই বাংলাদেশ আমরা গড়তে পারবো না। শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। মানুষের চিন্তা-ভাবনা, দর্শন ও সৃজনশীলতা এখন উন্মুক্ত অবস্থায় আছে। সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করতে হবে, যাতে সবাই নিজের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবে এসবের কথা বলা আছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হতে পারলে, আমরা যারা আন্দোলন করেছি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, যারা একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি— জাতীয় সরকার গঠন করে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব। বিএনপি একা নয়, আমরা যারা সম্মিলিতভাবে ৩১ দফা প্রণয়ন করেছি, সবাই মিলে এটি বাস্তবায়ন করব।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন করতে হবে জানিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘যে নতুন পথ তারেক রহমান দেখিয়েছেন— একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, অন্যের প্রতি সহনশীলতা ও সহানুভূতি দেখানো। অন্য মত হলেও সেটি গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনতে হবে। শুধুমাত্র সংস্কার করলেই হবে না, রাজনৈতিক সংস্কারের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কেউ বললেও তাকে সম্মান জানাতে হবে, তার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে হবে। দ্বিমত পোষণ করব, কিন্তু সম্মান দিতে হবে। আপনারা দেখেছেন, তারেক রহমানকে একটি পত্রিকায় কার্টুনের মাধ্যমে সমালোচনা করা হয়েছিল। পরে তিনি বলেছেন— ‘এটার জন্যই তো আমরা যুদ্ধ করেছি, এ স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য। এ স্বাধীনতা পাওয়ার জন্যই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি।’’
ভিন্ন একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আগের মতো দেশ পরিচালনা করা যাবে না। নতুন ভাবনায়, নতুন চিন্তায় আমরা যে বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি, সেই বাংলাদেশ হবে ভিন্ন বাংলাদেশ। অতীতের ভুল-ত্রুটি মুছে দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি নতুন বাংলাদেশ গড়া হবে।
বইমেলা ও মুক্তচিন্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উন্মুক্ত লেখাপড়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশের লেখাগুলোকে সম্মান জানাতে হবে, সব বিষয়ে লেখকদের সমর্থন দিতে হবে। বাংলাদেশের শিক্ষিত মানুষ ও লেখকদের জন্য আমাদের জায়গা তৈরি করতে হবে।’
নতুন নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী চিন্তার অনুসারীদের আগামী দিনে এ স্বাধীনতার চেতনাতেই বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে। আমরা সংঘর্ষের রাজনীতি চাই না, প্রতিশোধের রাজনীতি চাই না। হ্যাঁ, বিচার অবশ্যই করতে হবে— যারা খুন করেছে, গুম করেছে, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কাউকে বিচারের বাইরে রাখা যাবে না। একইসঙ্গে দেশ গঠনের প্রকল্পে বিএনপির যে চিন্তা রয়েছে, সেটিই মাথায় রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, নগর আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর।
বাংলানিউজবিডিহাব/আইসি/এইচআই