ক্রোমোজোম কাকে বলে – ক্রোমোজোম ( Chromosome ) শব্দটি গ্রিক শব্দ থেকে এসেছে এটি ভাঙলে হয়, যেমন Chroma = রং এবং Soma = দেহ বা বস্তু । তাহলে বলা যায়, কোশের নিউক্লিয়াসের ভিতরে সূক্ষ্ম সূতার মতো যে বস্তু গাঢ় রং ধারণ করে তাকে ক্রোমোজোম বলে ।
বিজ্ঞানী ওয়াল্ডেয়ার ( Waldeyer ) 1888 খ্রিস্টাব্দে ঐ বস্তুকে ক্রোমোজোম নাম দেন । ক্রোমোজোমের মাধ্যমে বংশগতির একক জিন এক জন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে বাহিত হয় ।
ক্রোমোজোম কাকে বলে
ক্রোমোজোম হলো আমাদের শরীরে অবস্থানরত প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াসের মধ্যভাগে অবস্থিত একপ্রকার শক্ত কুন্ডলীকৃত DNA এর একটি বান্ডিল যা বংশ বিস্তারে বিশেষ ভূমিকা রাখে তাকেই বলা হয় ক্রোমোজোম ।
অন্যভাবে বলতে গেলে, কোশের নিউক্লিয়াসের ভিতরে অবস্থিত নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিন সমন্বয়ে গঠিত স্বপ্রজননক্ষম যে সুতোর মতো অংশ প্রজাতির বংশগত বৈশিষ্ট্যাবলি বংশ পরম্পরায় সঞ্চারিত করে তাকে ক্রোমোজোম ( Chromosome ) বলে ।
ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ
দেহ গঠন ও লিঙ্গ নির্ধারণের ওপর ভিত্তি করে ক্রোমোজোম কে দুই ভাগে ভাগ করা হয় যথা –
- অটোজোম বা দেহ ক্রোমোজোম
- অ্যালোজোম বা সেক্স ক্রোমোজোম
সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুযায়ী ক্রোমোজোমকে চার ভাগে ভাগ করা হয় যথা-
- মেটাসেন্ট্রিক
- সাবমেটাসেন্ট্রিক
- অ্যাক্রোসেন্ট্রিক
- টেলোসেন্ট্রিক
সেন্ট্রোমিয়ারের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ক্রোমোজোম 4 প্রকার যথা-
- মনোসেন্ট্রিক
- ডাইসেন্ট্রিক
- পলিসেন্ট্রিক
- অ্যাসেন্ট্রিক
কার্যগত দিক থেকে ক্রোমোজোম কে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
- অটোজোম
- সেক্স ক্রোমোজোম।
অটোজোম: যে সমস্ত ক্রোমোজোম জীবদেহের দৈহিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে অটোজোম বলে। মানুষের ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের মধ্যে ২২ জোড়া অটোজোম।
সেক্স ক্রোমোজোম: যে ক্রোমোজোম জীবের লিঙ্গ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, তাকে সেক্স ক্রোমোজোম। মানুষের দেহে সেক্স ক্রোমোজোম একজোড়া। পুরুষের দেহে XY স্ত্রী দেহে XX ।
সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুযায়ী ক্রোমোজোমের শ্রেণীবিভাগ —
- (১) টেলোসেন্ট্রিক
- (২) অ্যাক্রোসেন্ট্রিক
- (৩) সাবমেটাসেন্ট্রিক
- (৪) মেটাসেন্ট্রিক।
টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম: যে ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ার ক্রোমোজোমের একেবারে শেষে অবস্থান করে, তাকে টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে।
অ্যাক্রোসেন্ড্রিক ক্রোমোজোম: যে ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের কোনো একটি প্রান্তের কাছাকাছি অবস্থান করে, ফলে ক্রোমোজোমের একটি বাহু বেশ বড়ো এবং অন্য বাহুটি বেশ ছোটো হয়, তাকে অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে।
সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম: যে ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের মাঝখান থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত, তাকে সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে।
মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম: যে ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের মাঝখানে অবস্থিত তাকে মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে।
সেন্ট্রোমিয়ারের সংখ্যা অনুযায়ী ক্রোমোজোমের শ্রেণীবিভাগ —
- (১) আসেন্টিক
- (২) মনোসেন্ট্রিক
- (৩) ডাইসেন্ট্রিক
- (৪) পলিসেন্ট্রিক।
আসেন্ট্রিক: যে ক্রোমোজোমে সেন্ট্রোমিয়ার থাকে না তাকে আসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে।
মনোসেন্ট্রিক: যে ক্রোমোজোমে একটিমাত্র সেন্ট্রোমিয়ার থাকে তাকে মনোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে।
ডাইসেন্ট্রিক: যে ক্রোমোজোমে দুটি সেন্ট্রোমিয়ার থাকলে তাকে ডাইসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে।
পলিসেন্ট্রিক: যে ক্রোমোজোমে দুই-এর বেশি সেন্ট্রোমিয়ার যুক্ত থাকে তাকে পলিসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে।
ক্রোমোজোমের সংখ্যা
কোনো প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি জীবের দেহকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা নির্দিষ্ট , অর্থাৎ ধ্রুবক ( Constant ) । উদাহরণস্বরূপ , মানুষের দেহকোষে ক্রোমোজোমের সংখ্যা 23 জোড়া বা 46 টি । এর মধ্যে 44 টি অটোজোম ও 2 টি সেক্স ক্রোমোজোম ।
মানুষের শরীরে ক্রেমোজোমের সংখ্যা হল 23 জোড়া (46 টি ) এই 23 জোড়া ক্রোমোজোমের মধ্যে এক জোড়া সেক্স ক্রোমোজোম থাকে যা আপনি পুরুষ না মহিলা তা নির্বাচন করে । মেয়েদের ক্ষেত্রে XX এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে XY থাকে ।
উদ্ভিদ | ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম সংখ্যা |
ধান | 24 |
পেঁপে | 18 |
পেঁয়াজ | 16 |
ভুট্টা | 20 |
মূলো | 18 |
বাঁধাকপি | 18 |
মটর | 14 |
তরমুজ | 22 |
চা | 30 |
প্রাণী | ক্রোমোজোম সংখ্যা |
মানুষ | 46 |
কুকুর | 78 |
বিড়াল | 38 |
অ্যানোফিলিস মশা | 6 |
শিম্পাঞ্জি | 48 |
কিউলেক্স মশা | 6 |
সোনা ব্যাঙ | 26 |
কুনো ব্যাঙ | 22 |
বানর | 42 |
ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন
ইউক্যারিওটিক কোশের ক্রোমোজোম যে জৈব পদার্থ দিয়ে গঠিত হয় তাকে ক্রোমাটিন ( Chromatin ) বলে । ক্রোমাটিন
( i ) 45 % ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড ( Deoxyribonucleic Acid or DNA ) এবং
( ii ) 45 % হিস্টোন ( Histone ) নামক ক্ষারীয় প্রোটিন দ্বারা গঠিত ।
এছাড়া ক্রোমাটিনে
( iii ) প্রায় 5 % রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড Ribonucleic Acid or RNA ) ,
( iv ) প্রায় 5 % অহিস্টোন নামক আম্লিক প্রোটিন এবং
( v ) অতি সামান্য পরিমাণে ধাতব আয়ন ( Ca , Mg , Fe প্রভৃতি ) -এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় ।
এই পোষ্টের রিলেটেড পোস্ট | |
হোমপেজে | এখানে ক্লিক করো |
ক্রোমোজোম কাকে বলে FAQ
[sc_fs_multi_faq headline-0=”h2″ question-0=”ক্রোমোজোম কাকে বলে?” answer-0=”কোশের নিউক্লিয়াসের ভিতরে সূক্ষ্ম সূতার মতো যে বস্তু গাঢ় রং ধারণ করে তাকে ক্রোমোজোম বলে ।” image-0=”” headline-1=”h2″ question-1=”ক্রোমোজোম নাম সর্বপ্রথম কে দেয়?” answer-1=”বিজ্ঞানী ওয়াল্ডেয়ার ( Waldeyer ) 1888 খ্রিস্টাব্দে ঐ বস্তুকে ক্রোমোজোম নাম দেন ।” image-1=”” count=”2″ html=”true” css_class=””]