
সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, কোনো দল বা ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে নয়, যাদের জীবন হুমকির মধ্যে পড়েছিল তাদেরকে উদ্ধার করেছি আমরা। সেটা দলের পরিচয়ে মুখ্য বিষয় ছিল না। জীবন রক্ষার্থেই এ কাজটি করা হয়েছে। গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের উদ্ধার তৎপরতায় দলটির প্রতি সেনাবাহিনীর কোনো বিশেষ নজর রয়েছে কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে সেনা সদরের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সেনাসদর বলেছে, গোপালগঞ্জে এনসিপির অনেকের জীবননাশের হুমকি ছিল। সেই ব্যক্তিদের জীবন বাঁচানোর জন্যই সেনাবাহিনী সহায়তা করেছে। আত্মরক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়েছে। এখানে জীবন বাঁচানোই মূল লক্ষ্য ছিল। অন্য কিছু নয়।
মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক বলেন, কাউকে আকস্মিক মৃত্যুর মুখে রেখে বা মৃত্যুর মুখোমুখির সময় তার প্রতি নজর না দিয়ে সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে থাকবে না। ব্যাপারটা (গোপালগঞ্জের) নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। সেনাবাহিনীর কাছে প্রত্যেকটা জীবন মূল্যবান।
তিনি বলেন, যে কোনো কারণেই হোক, জীবনহানি আমরা কখনোই কাম্য করি না, আশাও করি না। কিন্তু গোপালগঞ্জে যে ঘটনাটি হয়েছে সেটি দুঃখজনক। কোন প্রেক্ষাপটে ঘটেছে এবং কেন সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বল প্রয়োগ করতে হয়েছিল, সে বিষয়ে তদন্ত করতে একজন বিচাপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি খুঁজে বের করবে যে কীভাবে এটা হয়েছে, কেন হয়েছে, প্রেক্ষাপট কী ছিল। আমরা সে পর্যন্ত অপেক্ষা করি।
‘মেজর সাদিক নামে এক কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে’- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন আলোচনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, মেজর সাদিকের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। যদিও বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। তারপরেও আমি বলব, যে এরকম একটা ঘটনার কথা জানার পরে সে সেনাবাহিনী হেফাজতে আছে এবং তদন্ত চলমান আছে। তদন্তে তার দোষ প্রমাণিত হলে নিঃসন্দেহে সেনাবাহিনীর প্রচলিত নিয়মে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন আছে এর বেশি এই মুহূর্তে বলা আমার মনে হয় সমীচীন হবে না।
আরেক প্রশ্নের জবাবে নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, ইউপিডিএফ, জেএসএসের মত যে দলগুলো আছে, তাদের আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় মারামারি হয়। অবশ্য সেনাবাহিনী কাজ করছে এবং সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করছে যাতে করে এটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। সেনাবাহিনী একাই কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের স্টেক হোল্ডার নয়। বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সবাই কিন্তু এটার অংশ। সবাই যদি সমন্বিতভাবে কাজ করে আমি নিশ্চিত যে এটাকে আরও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে যাওয়া সম্ভব এবং এটা অবশ্যই প্রয়োজন।
পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী কেএনএফের সঙ্গে আরাকান আর্মির ‘যোগসাজসের’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আরাকান আর্মি এখন এমন একটা অবস্থায় আছে, তাদের সঙ্গে কেএনএফের যোগসূত্র সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তারা মোটামুটি একই গোত্রীয় মানুষ এবং একই ধরনের মানসিকতা নিয়ে তারা কাজ করছে। সেক্ষেত্রে কেএনএফ আরাকান আর্মির কাছ থেকে যদি কোনো অস্ত্র পেয়েও যায় এটাতে আমি অবাক হব না।
সংবাদ সম্মেলনে মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি সেনাবাহিনীর পক্ষপাত নেই। গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের জীবননাশের হুমকি থাকায় সেনাবাহিনী কেবল তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। এখানে কোনো দলকে বিশেষভাবে সহায়তা করার প্রশ্নই ওঠে না। গোপালগঞ্জে আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করলে বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারত।
গোপালগঞ্জে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল স্টাফ কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, এটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ছিল। যেখানে শুধু ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়নি, ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। সেখানে জীবননাশের হুমকি ছিল। তখন আত্মরক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলপ্রয়োগ করতে বাধ্য হয়েছে। এখানে প্রাণঘাতী কোনো অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়নি।
চাঁদাবাজি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, চাঁদাবাজি বা এ ধরনের ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর দায়িত্ব পালন করার কথা, তারা আরও সক্রিয় হলে এ ধরনের ঘটনা কমে আসবে। এর সঙ্গে সেনাবাহিনীও তার আভিযানিক দায়িত্ব পালন করছে। সবাই একত্রে কাজ করলে চাঁদাবাজি আরও কমে আসবে