এন্টারটেইনমেন্ট করেসপনডেন্ট
৯ মার্চ ২০২৫ ১৭:৪৯
পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদানের নতুন নীতিমালা জারি করেছে সরকার। গেল ৬ মার্চ এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে:
• নতুন নীতিমালায় প্রতি অর্থবছরে ১২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান পাবে, যা পূর্বে ছিল ১০টি। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১০ থেকে বাড়িয়ে ২০ করা হয়েছে।
• পূর্বের নীতিমালায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হতো, তবে নতুন নীতিমালায় এর গুরুত্ব কিছুটা কমানো হয়েছে। নতুন নীতিমালায় অন্তত একটি প্রামাণ্যচিত্র, একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র এবং বাংলা অঞ্চলের রাজনৈতিক ইতিহাস, আন্দোলন ও বিপ্লব নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য অনুদান নির্ধারিত থাকবে।
• কাহিনিকার ও চিত্রনাট্যকারদের সম্মানী বাড়ানো হয়েছে। কাহিনিকাররা এখন ২ লাখ টাকা এবং চিত্রনাট্যকাররা ৩ লাখ টাকা প্রণোদনা পাবেন, যেখানে পূর্বে দুজনই ৫০ হাজার টাকা করে পেতেন।
• অভিজ্ঞ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অন্তর্ভুক্তির জন্য নতুন নীতিমালায় নির্ধারিত হয়েছে যে, প্রস্তাবিত পরিচালকের অন্তত একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, অথবা চলচ্চিত্র নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
• পূর্বের নীতিমালায় নির্মাতাদের ৯ মাসের মধ্যে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ শেষ করতে হতো। নতুন নীতিমালায় এই সময়সীমা ১৮ মাস করা হয়েছে।
• স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্রের জন্যও সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে—স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য ১২ মাস এবং প্রামাণ্যচিত্রের জন্য ২৪ মাস নির্ধারণ করা হয়েছে।
• বিশেষ পরিস্থিতিতে সময় বৃদ্ধির সুযোগ রাখা হয়েছে: পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য সর্বোচ্চ দুইবার ৬ মাস করে বাড়ানো যাবে, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য দুইবার ৩ মাস করে সময় বৃদ্ধি করা যাবে।
অর্থ প্রদান পদ্ধতির পরিবর্তন
নতুন নীতিমালায় অর্থ প্রদান প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করা হয়েছে:
প্রথম কিস্তি: মোট অনুদানের ২০ শতাংশ। এই অর্থ পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে নির্মাতাকে শুটিং শিডিউল, নির্মাণ পরিকল্পনা, লোকেশন পারমিট ও শিল্পীদের চুক্তিপত্র জমা দিতে হবে।
দ্বিতীয় কিস্তি: চলচ্চিত্র নির্বাচন ও তত্ত্বাবধান কমিটির অনুমোদনের পর মোট অনুদানের ৫০ শতাংশ প্রদান করা হবে।
তৃতীয় কিস্তি: নির্মাতাকে চলচ্চিত্রের কমপক্ষে ৫০ শতাংশের রাফ কাট ফুটেজ ও শিল্পীদের পারিশ্রমিকের প্রমাণ জমা দিতে হবে, এরপর অনুদানের আরও ২০ শতাংশ প্রদান করা হবে।
চূড়ান্ত কিস্তি: চলচ্চিত্র মুক্তির পর বাকি ১০ শতাংশ অর্থ প্রদান করা হবে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন
• বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) বা তার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা, ডাবিংসহ অন্যান্য পোস্ট-প্রোডাকশন কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। বিএফডিসি সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিতে পারে।
• নির্মাতা, পরিচালক বা আবেদনকারীদের কোনো নির্দিষ্ট সংগঠনের সদস্য হওয়ার প্রয়োজন নেই।
• অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের মুক্তি সংক্রান্ত নিয়ম নির্ধারণ করা হয়েছে—এসব চলচ্চিত্রকে অন্তত পাঁচটি সিনেমা হলে বা ১০টি জেলা পর্যায়ের ভেন্যুতে (যেমন তথ্য কমপ্লেক্স, শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন, পাবলিক মিলনায়তন বা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম) প্রদর্শন করতে হবে।
• এসব চলচ্চিত্রকে অন্যান্য চলচ্চিত্রের তুলনায় মুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
• সিনেমা হল মালিকদের উৎসাহিত করতে সরকার কর ছাড়সহ অন্যান্য সুবিধা দেবে।
• নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে চলচ্চিত্র জমা দিতে ব্যর্থ হলে সরকার আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
• নির্মাণাধীন বা মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য অনুদানের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে না।
• অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র যদি মৌলিক না হয় বা নির্মাতা চুক্তিভঙ্গ করেন, তবে অনুদানের অর্থ সুদসহ ফেরত দিতে হবে।
banglanewsbdhub/এজেডএস
চলচ্চিত্রে অনুদান
নীতিমালা পরিবর্তন