অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর জন্য নানা পদক্ষেপের পরেও চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা। শুধু ঘাটতি নয়, অর্থবছরের অর্ধেক সময় পার হলেও দেখা যায়, এ সময়ে রাজস্ব আহরণ গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১৪ হাজার ৩৩৭ কোটি ১০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা; অর্থাৎ এ সময়ে রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৭ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। পুরো অর্থবছরের জন্য এনবিআরকে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল এক লাখ ৫৭ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় এক হাজার ৫৪২ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে; যা দশমিক ৯৮ শতাংশ কম।
রাজস্বের এ ঘাটতি কাটাতে সরকার সম্প্রতি শতাধিক পণ্য ও সেবায় মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক ও আবগারি শুল্ক বাড়িয়েছে।
২০২৪ সালের জুনে বাজেট ঘোষণার পর মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, রিজার্ভের পতনসহ অর্থনীতিতে নানা সংকট শুরু হয়। সে বছর জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং এর ধারাবাহিকতায় অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।
আন্দোলনের ধাক্কা ও সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ার প্রেক্ষাপটে আমদানি, রপ্তানি ও উৎপাদনসহ অর্থনীতির সকল সূচক মন্থর হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব আহরণ কমার ধারাও অব্যাহত থাকে। তবে ডিসেম্বরে এসে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরতে দেখা গেছে রাজস্ব আহরণ।
হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বরে গত বছরের এ সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সময় দেখেছে ক্ষমতার পালাবদলের মাস অগাস্ট। ওই মাসে তিন দিন সরকারবিহীন ছিল দেশ, যা এর আগে কখনও দেখা যায়নি।
সরকার পতনের পর পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটির সদস্যরা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ায় ব্যবসার পরিবেশ ছিল নাজুক।
ব্যবসায়ীরা শুল্কায়ন করেও মাল খালাস ও গুদামে বা উৎপাদনস্থলে আনার সাহস করছিলেন না।
যার প্রতিফলন দেখা গেছে অগাস্ট মাসের রাজস্ব আদায়ে। এ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ রাজস্ব আদায় কম হয়েছে।
রাজস্ব আদায়ে তার পরেই সবচেয়ে খারাপ সময় গেছে নভেম্বরে। এ সময়ে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের শঙ্কা না দেখা গেলেও রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
আন্দোলনের মাস জুলাইয়ে সংঘাত, কারফিউ ও ইন্টারনেট ব্লাকআউটের ফলে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম প্রায় ১০ দিনের জন্য স্থবির ছিল। উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যহত হওয়ায় এ মাসে রাজস্ব আদায় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ১২ শতাংশ কম হয়েছে।
সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতি অবশ্য তুলনামূলক ভাল ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হতে শুরু করার পর এ সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ০৩ শতাংশ।
আমদানি ও আয়করে এনবিআর প্রবৃদ্ধি দেখলেও মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের ভোগ কমে যাওয়ায় মূল্য সংযোজন কর আদায় কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। এর ফলে মাস বিবেচনায় অক্টোবরের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে সামান্য।