জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বরাবরের মতো নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। আগামী ১০ জানুয়ারি (শুক্রবার) ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও শ্রদ্ধা নিবেদনের নির্দেশ দিয়েছে দলটি। প্রতিটি এলাকায় আলোচনা সভা এবং শীতবস্ত্র ও খাবার বিতরণ।
এছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা পর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অনুরূপ কর্মসূচি আয়োজনের আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন উপযোগী কর্মসূচি গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, পাকিস্তানের কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠ থেকে মুক্তি পেয়ে তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাস রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি বিজয় অর্জন করে। মুক্তিযুদ্ধের নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত ও স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে এই বিজয় সম্পন্ন হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলার আকাশে সূর্যোদয়ের মতোই ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফিরে আসেন তার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে। জন্মভূমির মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হয়ে ওঠেন। আনন্দ আর বেদনায় তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু। তাদের প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দের কান্নায় সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধুর ধ্বনিতে কম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস। জনপ্রিয় শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী বাগানে দাঁড়িয়ে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন, ‘যে ভূমিকে আমি অনেক ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালোবাসি, জানতাম না আমি পারবো কিনা। বাংলায় যেতে। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাই, মা-বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীনতা, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’
যুদ্ধবিধ্বস্ত ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল সদ্য স্বাধীন বাঙালি জাতির জন্য এক বিরাট অনুপ্রেরণা। তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ‘অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাত্রা’ বলে বর্ণনা করা হয়েছিল। দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের পর বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে বাঙালি জাতি যখন কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন তখন পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। – বলিদান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর ২৬ মার্চ ভোররাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয় ২৫ মার্চ, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে। প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গুনতে 290 দিন পাকিস্তান কারাগারে বন্দী থাকার পর মুক্ত-স্বাধীন মাতৃভূমিতে ফিরেছেন বাঙালির ইতিহাসের বরপুত্র শেখ মুজিবুর রহমান। তবে আজকের অবৈধ দখলদার ফ্যাসিবাদী ইউনূস সরকার বাংলাদেশ থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ দিবস, সংবিধান দিবস, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত দিবস বা জাতীয় শোক দিবসসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিবস বাতিল করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এই অপচেষ্টার প্রতিবাদ করছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তাদের অটুট সমর্থন ব্যক্ত করেন। প্রতি বছর কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উদযাপন করে।