
বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই কমিশন-এইচআরসির কার্যালয় খোলার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে হেফাজতের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী হুঁশিয়ারি বলেছেন, বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় খুলতে দেওয়া হবে না।
শনিবার বিকালে ঢাকায় জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মিলনায়তনে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর শাখা আয়োজিত দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন বলে সংগঠনটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
শাপলা চত্ত্বরের ঘটনা, চব্বিশের ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে ‘শহীদদের’ রূহের মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনায় দেশব্যাপী দোয়া-মাহফিল ও আলোচনা সভার এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
তারই অংশ হিসেবে ঢাকায় আয়োজিত আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেফাজতের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যার সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় কাঠামো ইসলামী মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই দেশের সংস্কৃতি, পরিবারব্যবস্থা, নৈতিক রীতিনীতিকে অক্ষুণ্ণ রাখা আমাদের ধর্মীয় ও নাগরিক দায়িত্ব। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে কার্যালয় স্থাপনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করছি।
অতীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘মানবাধিকারের’ নামে ইসলামি শরিয়াহ, পারিবারিক আইন ও ধর্মীয় মূল্যবোধে হস্তক্ষেপের অপচেষ্টা করেছে দাবি করে তিনি বলেন, এসব হস্তক্ষেপ একদিকে যেমন জাতীয় সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত, অন্যদিকে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিরও পরিপন্থি। তাই বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় খুলতে দেয়া হবে না।
তিন বছরের জন্য ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের (এইচআরসি) একটি মিশন অফিস চালু করার পক্ষে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২৯ জুন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) অনুমোদন দেওয়া হয়।
হেফাজতের মহাসচিব সাজিদুর রহমান বলেন, মানবাধিকারের নামে যদি ধর্মীয়, পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামোতে বিদেশি সংস্কৃতির চাপানো নিয়ম চালু করার চেষ্টা করা হয়, তবে ঈমানদার জনতা তা কখনো মেনে নেবে না।
প্রয়োজনে রাস্তায় নামার হুঁশিয়ারি দিয়ে সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ছিল একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত, বৈষম্যহীন ও স্বাধীন বাংলাদেশ গঠন- যেখানে কোনো বিদেশি আধিপত্য থাকবে না, থাকবে না রাজনৈতিক নিপীড়ন। এই শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের উচিত ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করা। ব্যর্থ হলে ইতিহাস ও জনতার কাঠগড়ায় তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
সভায় হেফাজতের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব জুনাইদ আল হাবিবের সভাপতিত্ব করেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-সংগঠনের নায়েবে আমির আবদুল হামিদ, মাহফুজুল হক, মহিউদ্দিন রাব্বানী, আহমদ আলী কাসেমী, খুরশিদ আলম কাসেমী, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মনির হোসাইন কাসেমী, খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, আতাউল্লাহ আমিন, আজহারুল ইসলাম।