জাতীয় নাগরিক পার্টি : কয়েকটি প্রশ্ন উত্থাপন – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



জাতীয় নাগরিক পার্টি নামের যে রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হল, এ পার্টি নিয়ে জনপ্রত্যাশা ও জন-আকাঙ্ক্ষা মোটেই পূরণ হবে না। কেন হবে না তার কয়েকটি দিক উল্লেখ করছি-

এক. যে আন্দোলনের মাধ্যমে এ দলের আত্মপ্রকাশ হয়েছে, সেই আন্দোলনের নৈতিক কোনো ভিত্তি ছিল না। সেই আন্দোলনে মিথ্যাচার, গুজব, ষড়যন্ত্রসহ নানা বিষয় ছিল যা এদেশের মানুষ হাড়ে হাড়ে বুঝছে এবং বুঝতে পারছে।

দুই. যে আন্দোলন ওপর ভিত্তি করে এ রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়েছে, সেই আন্দোলন ছিল সহিংস। হত্যা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না এ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা। পুলিশবাহিনীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যার নেপথ্যে কারা ছিল- তা জাতি অনুধাবন করছে।

তিন. এ আন্দোলনে জড়িতরা এদেশের মুক্তিযুদ্ধ, আবহমান বাংলার পলিকণাকে ধারণ করে না। তারা অলরেডি তাদের আচার-আচরণ ও কথাবার্তায় তা বহুবার প্রকাশ করেছে।

চার. জাতির পিতার ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরের বাড়িসহ এদেশের ঐতিহাসিক স্থাপনা পুড়িয়ে তারা প্রমাণ করেছে, তারা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ নয়, বরং তারা একাত্তর পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যেতে চায়। ক্ষমতা দখল করে তারা যে অরাজকতা করেছে তা-ই তাদের বিনাশের জন্য যথেষ্ট।

পাঁচ. আওয়ামী লীগের নিরীহ কর্মী হত্যা, তাদের বাড়িঘর পোড়ানোসহ যে বর্বরতা এ আন্দোলনের অনুসারীরা করেছে, তার মধ্যেই তাদের বিনাশের পর্যন্ত উপাদান রয়েছে।

ছয়. মব ভায়োলেন্স-এর নামে এ দলের অনুসারীরা অলরেডি যা করেছে, তাতেই এ দলের বিনাশী এলিমেন্ট পাওয়া যাবে।

সাত. সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কোনো দল সৃষ্টি হলে তারা মাটি ও মানুষের জন্য কাজ করতে পারে না। নেতৃত্ব তৈরি হয় প্রতিকূল পরিবেশে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাসহ এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে।

আট. নেতৃত্বে পরিপক্কতা থাকতে হয়, নবীন-প্রবীণের সম্মিলন থাকতে হয়, ঐতিহাসিক পটভূমি ও ভিত্তি থাকতে হয়- এসবের কোনোটাই নেই নবগঠিত এ রাজনৈতিক দলে।

নয়. তৃণমূলের মানুষের অনুভূতির ও আবেগের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি কাজ করার ঐতিহ্যগত অভিজ্ঞতা থাকতে হয়, তা নেই এ নবগঠিত রাজনৈতিক দলের। এ অভিজ্ঞতা তৈরি করার শক্তি, সাহস, সময়, ধৈর্য আছে কি এ দলের কর্মীদের?

দশ. রাজপথে টিকে থাকার লড়াইয়ে তাদের পূর্বাভিজ্ঞতা নেই, যৌবনে পদার্পণ করা কর্মীরা সাংসারিক জীবনে প্রবেশ করলেই মোহভঙ্গ হবে। তবে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা রাজকীয় জীবন বেছে নিলে জনগণ মোটেই ছাড় দিবে না।

এগার. রাষ্ট্রপরিচালার অভিজ্ঞতাহীন এমন নবগঠিত রাজনৈতিক দল জনগণ কেনইবা গ্রহণ করবে? জনগণের পাল্স বুঝতে কৃষক-শ্রমিক-খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধিত্ব নেই এ রাজনৈতিক দলে। কিন্তু যারা এদেশের রাজনীতিতে এখনও সক্রিয়, তাদের প্রত্যেকের এসব জায়গায় শক্তিশালী ভিত রয়েছে।

বার. যত রাজনৈতিক দল দেশে ফাংশনাল রয়েছে, এদের সঙ্গে সুসম্পর্কের কোনো শক্তিশালী ভিত নেই, কাজেই এসব দলকে কেনইবা তারা মেনে নেবে?

তের. এ রাজনৈতিক দলে উদারতা, সুস্থ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা এখনও পরিলক্ষিত হয়নি।

চৌদ্দ. উগ্রতা, বর্বরতা, চরমপন্থা, অসহিষ্ণুতা, হিংসা ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড এরা পরিহার করেনি। বরং তারা প্রচলিত ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির চর্চা করছে। কীভাবে রাষ্টযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়- এমন নীতিই নবগঠিত দলটিতে বিদ্যমান।

পনের. সর্বোপরি, দলটির আদর্শিক ও চেতনাগত কোনো ভিত্তি নেই, নেই কোনো রাজনৈতিক দর্শন। যা আছে, তা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পেশিশক্তি প্রয়োগ ও প্রদর্শন।

লেখক : কবি ও সাংবাদিক

  • জাতীয় নাগরিক পার্টি
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।