ফারহানা নীলা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:০০ | আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:০৬
ঢাকা: একুশ, বাঙালি ও বইমেলা। এই তিন যেন একই সূত্রে গাথা। তাইতো প্রতিবছর নতুন বইয়ের ঘ্রাণের অপেক্ষায় থাকে বইপ্রেমী বাঙালি। সময়ের পরিক্রমায় একটি বছর পেরিয়ে ফের দরজায় কড়া নাড়ছে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৫’।
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’- এই প্রতিপাদ্যে আসছে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে বইমেলার এবারের আয়োজন। বিগত বছরগুলো থেকে এবারের বইমেলার ভিন্নতা হচ্ছে- মানুষের আবেগমিশ্রিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফলে অর্জিত হয়েছে এক নতুন ব্যবস্থা। যে ব্যবস্থায় বৈষম্য বিলোপ করে নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। নতুন এই সময়ে কেমন হবে বইমেলা, প্রাপ্তির জায়গা কী; কী প্রত্যাশা আছে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের? এমনই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বাংলানিউজবিডিহাব গিয়েছিল লেখক, প্রকাশক ও আয়োজকদের কাছে। তাদের প্রতিক্রিয়া নিয়েই আমাদের আয়োজন…
বই প্রকাশের ক্ষেত্রে পেয়েছি স্বাধীনতা
বাংলা ধরিত্রর প্রকাশক দিলওয়ার হোসেন বাংলানিউজবিডিহাবকে বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে বই প্রকাশে অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। শেখ মুজিবের বই প্রকাশ করা ছিল বাধ্যতামূলক। সেক্ষেত্রে ভালো মানের বই বের করতে গিয়ে অনেকটা হিমশিম খেতাম। এ ছাড়া, আমাদের কিছু চাহিদার জায়গাও থাকতো। কিন্তু প্রাপ্তিগুলো ছিল অনেকটা মলিন। এবার ভালো লাগছে যে, বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নির্দেশনা নেই। আমরা স্বাধীন। যেকোনো ভালো মানের বই প্রকাশ করতে পারছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বই শুধু আমাদের ব্যবসা নয়, জ্ঞান মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াটাই আমাদের উদ্দেশ্য। পাঠকরা বই পড়তে আগ্রহী হবে, মানুষের জ্ঞানের বিকাশ ঘটাবে। আমরা আমাদের পছন্দ মতো বই মেলায় তুলব। পাঠকরা দেখবে, আর পছন্দ করে কিনবে। একেবারেই মুক্ত বইমেলা।’
তাই দাম অনুকূলে রাখার প্রত্যাশা করছি
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও লেখক আফজাল রহমান বাংলানিউজবিডিহাবর এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বইমেলায় পাঠকরা পছন্দের বইটা হাতে নিয়ে অনেক সময় কিনতে পারে না। কারণ, কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায়, বইয়ের দাম হয়েছে দ্বিগুণ। এদিকে, একটু নজর রাখতে হবে মেলা কর্তৃপক্ষকে। যাতে, সবার কেনার সামর্থ থাকে।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটা বিষয় হচ্ছে- শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রেসক্লাবে প্রতিদিনই কোনো না কোনো দাবি নিয়ে আন্দোলন চলছে। এর প্রভাব আবার বইমেলায়ও পড়তে পারে। তাই সরকারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
এবারের বইমেলায় কোনো বৈষম্য থাকবে না
কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন বাংলানিউজবিডিহাবকে বলেন, ‘এবারের বইমেলা গণ্যঅভ্যুত্থানের বিজয় মেলা। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টমুক্ত বইমেলা। একুশের বইমেলা আমাদের জাতিয় সংস্কৃতির একটা অংশ। যে মেলা আমাদের চেতনাকে সমৃদ্ধ করে প্রতিবছর। যদিও এক মাসের বিষয়, তার পরও প্রতিবছরই কিন্তু এর তাৎপর্য বহমান থাকে। এবার ছাত্র-জনতার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছে, সেই যাত্রায় কবি সাহিত্যিকরাও শামিল হয়েছে। আমরা কবি-লেখকরা চাই, এবারের বইমেলায় কোনো বৈষম্য থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এতদিন দেখা গেছে, বড় বড় অনেক প্রকাশক একটি নির্দিষ্ট দলের হয়ে কাজ করেছেন। অনেক ভালো ভালো প্রকাশকদের তখন জায়গা মেলেনি। এবার দেখছি সেই বৈষম্যটা নেই। মেলা প্রাঙ্গণও এই বৈষম্যমূলক আচরণমুক্ত থাকবে বলে প্রত্যাশা।’
বইমেলা হবে পরিচ্ছন্ন, সবচেয়ে বড় ও সেরা
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য আবুল বাসার ফিরোজ বাংলানিউজবিডিহাবকে বলেন, ‘এবারের বই মেলা হবে সবচেয়ে বড় ও পরিচ্ছন্ন; বৈষম্যহীন একটি মেলা। যেখানে থাকবে সবধরনের লেখক ও প্রকাশকদের বইয়ের ভাণ্ডার। থাকবে পলিথিনমুক্ত বেচাবিক্রি। জুলাই অভ্যুত্থানকে হৃদয়ে ধারণ করতে থাকছে জুলাই চত্ত্বর। লেখক-পাঠকদের জন্য থাকবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যেকোনো শঙ্কামুক্ত একটি বইমেলা আমরা এবার জাতিকে উপহার দেব।
বইমেলা আর বাঙালি একই সূত্রে গাথা। তাইতো নাড়ির টানে ছুটে আসে সব বয়সী মানুষ। তাই পাঠক, দর্শক ও লেখকদের মিলনমেলায় পরিণত হয় বইমেলা। এবারের বইমেলা নিয়েও সবার প্রত্যাশা একইরকম। নতুন বইয়ের গন্ধে বইপ্রেমীরা ছুটে আসবে বইমেলায়। ব্যাগভর্তি বই নিয়ে ফিরবে বাড়ি।
বাংলানিউজবিডিহাব/এফএন/পিটিএম