
ঢাকায় বসবাসকারী ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে উদ্বেগজনক মাত্রায় সিসার উপস্থিতি পেয়েছে আইসিডিডিআরবি। দূষিত ধূলিকণা, ব্যাটারি তৈরির কারখানা ও রান্নার পাত্র এই সিসার প্রধান উৎস বলে জানান গবেষকরা।
কারখানার ১ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসরত শিশু ৫ কিলোমিটার দূরত্বে বাস করা শিশুর চেয়ে ৪৩ শতাংশ বেশি সিসা দূষণে আক্রান্ত। ক্যান্সারের জন্য দায়ী কয়েকটি ভারী ধাতুর মধ্যে সিসা অন্যতম।
দেশে সিসা দূষণের ব্যাপকতা ও এর ভয়াবহতা কেমন তা নিয়ে গবেষণা করে আইসিডিডিআরবির হেলথ সিস্টেম ও পপুলেশন বিভাগ।
২০২২ থেকে ২০২৪ সালের গবেষণায় ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত পাঁচশ শিশুর রক্তে সিসার উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। এদের বয়স দুই থেকে চার বছর। সবার দেহে সিসা থাকলেও আটানব্বই শতাংশের দেহে পাওয়া যায় উদ্বেগজনক মাত্রার সিসা।
আইসিডিডিআরবির অ্যাসিস্ট্যান্ট সায়েন্টিস্ট ডা. জেসমিন সুলতানা বলেন, ‘আমরা পরিমাপ করে দেখেছি শতকরা ৯৮ ভাগ শিশুর শরীরে ৩৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি সিসা ছিল। তার মানে আমাদের এই শিশুদের অবস্থা খুবই ভয়ঙ্কর লেভেলে আছে।’
সিসানির্ভর শিল্প, ব্যাটারি রিসাইক্লিং কারখানা, সিসাযুক্ত প্রসাধনী ও রান্নার কাজে ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র দূষণের প্রধান কারণ হলেও অন্যান্য উৎস থেকেও দূষণ হতে পারে, বলছেন গবেষকরা। সিসা নিঃসরণকারী উৎসগুলো বন্ধ করতে না পারলে শিশুর নিরাপদ বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলেও শঙ্কা তাদের।
আইসিডিডিআরবির প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পুরাতন ব্যাটারি তো একটা জায়গায় আসে। সেখান থেকে এটা আসে ভাঙার জন্য, সেখান থেকে বিভিন্ন পার্টস সেপারেট করার জন্য একটা জায়গা তারা করে। এটাকে আগুনে পোড়ায়। বেশির ভাগ লেডের যোগানদাতা হচ্ছে ইন্টারনাল সোর্স। বাইরে থেকে কিন্তু আসছে না।’
আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘যারা খর্বকায়, তাদের শরীরে সিসার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আমাদের শিশুদের আজকে ব্রেইনই যদি ঠিকমত ডেভেলপ না করে, ওরা তো বড় হবে। তাহলে ওরা জাতীয় প্রোডাক্টিভিটিতে কি রোল প্লে করবে?’
ইউনিসেফের তথ্যমতে, বিশ্বে সিসা দূষণে আক্রান্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ চতুর্থ। প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু রক্তে উচ্চমাত্রার সিসা নিয়ে বেঁচে আছে।