প্রতীকী ছবি
ময়মনসিংহে মুঠোফোনে পরিচয়ের সূত্র ধরে এক তরুণীকে ডেকে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে চার তরুণের বিরুদ্ধে। ধর্ষণের পর ওই তরুণীকে মাঠে নিয়ে মারধরের সময় স্থানীয় এক কৃষক দেখতে পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জেলার ঈশ্বরগঞ্জে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার তরুণী (১৯) জেলার গৌরীপুর উপজেলার বাসিন্দা। অভিযুক্ত তরুণেরা ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের সোহাগী ইউনিয়নের চট্টি গ্রামের বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে তরুণীকে উদ্ধারের পর স্থানীয় একটি বাড়িতে রাখেন কৃষক জুয়েল মিয়া। তিনি বলেন, ‘রাতে বোরো ধানের জমিতে সেচ দিতে গিয়ে একটি মেয়ের চিৎকার শুনতে পাই। শুরুতে ভয় পেলেও টর্চের আলোতে চার তরুণ ও এক তরুণীকে দেখি। তারা সবাই আমার এলাকার ছেলে। আমি কে কে বলে চিৎকার করতেই মেয়েটি দৌড়ে আমার কাছে এসে বলতে থাকে, “বাবা আমারে বাঁচাও।” তখন চার তরুণ দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়। মেয়েটি আমাকে জানায়, চার তরুণ তাকে ধর্ষণ করেছে।’
পরে ভুক্তভোগী তরুণীকে স্থানীয় এক বাড়িতে রাখা হয়। জুয়েল মিয়া বলেন, ‘যেভাবে মেয়েটি চিৎকার করছিল, মনে হচ্ছিল তাকে মারধর করে মেরে ফেলা হতো। কিন্তু আমি সেখানে যাওয়া বেঁচে যায়।’
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযুক্ত চার তরুণ হলেন সোহাগী ইউনিয়নের চট্টি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (২৪), শান্ত মিয়া (১৯), জীবন মিয়া (২২) ও মো. নাঈম মিয়া (১৯)। তাঁদের মধ্যে জীবন ও নাঈম কৃষিকাজ করেন এবং জাহাঙ্গীর ও শান্ত ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালান।
শুক্রবার বিকেলে ভুক্তভোগী তরুণী প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় এক বছর আগে মুঠোফোনে ইজিবাইকচালক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে গৌরীপুর পৌর শহরের পাট বাজার থেকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে তাঁকে ডেকে নিয়ে আসেন। মাগরিবের আজানের পর চট্টি গ্রামের একটি বাড়িতে নেওয়া হয় তাঁকে। তখন বাড়িতে কেউ ছিল না। জাহাঙ্গীরের সঙ্গে আরও দুজন ইজিবাইকে ছিলেন, বাড়িটিতে অবস্থান করছিলেন আরও একজন। চারজন মিলে সেখানে তাঁকে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করেন।
ওই তরুণী বলেন, একপর্যায়ে তাঁকে ঘর থেকে একটি খোলা মাঠে নিয়ে মারধর করতে থাকেন ওই চারজন। ছেড়ে দেওয়ার জন্য কান্নাকাটি করলে তাঁরা বিকাশের মাধ্যমে টাকা এনে দিতে বলেন। কিন্তু মা–বাবা ফোন চালান না জানালে বেদম মারতে থাকেন। ওই অবস্থায় একজন ব্যক্তি সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করেন। তা না হলে তাঁরা হয়তো তাঁকে মেরে ফেলতেন। তিনি এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার চান।
ঘটনার পর থেকে চার তরুণই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। যে বাড়িতে নিয়ে তরুণীকে নির্যাতন চালানো হয় সেই নাঈমকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাঁর দাদি বলেন, ‘আমার নাতি রাইত থাইকা বাড়িত নাই। এই কাম সে অন্যদের পাল্লায় পড়ে করছে।’
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ঘটনাটি জানার পর মেয়েটিকে থানায় নিয়ে আসতে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সূত্র : প্রথম আলো