
ফেনীর পাঁচগাছিয়ায় দুই কিশোরের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগে সালিশে তাদের মায়েদের প্রকাশ্যে নাকে খত দিতে বাধ্য করার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় বিএনপির এক নেতা তাদের নাকে খত দিতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গত বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটে।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলু পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক। পুলিশ বলছে, ভাইরাল ভিডিওর বিষয়ে তারা খোঁজখবর নিচ্ছে, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, ভিডিওটি ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামের খালুর দোকান এলাকার। সেখানকার দুই কিশোরের বিরুদ্ধে মুরগি ও কবুতর চুরির অভিযোগে সালিশের আয়োজন করা হয়। এতে আশপাশের মানুষকে জড়ো করেন মুরগি ও কবুতরের মালিক জাহাঙ্গীর আলম। সালিশ বৈঠকে বিএনপি নেতা দেলু ওই দুই কিশোরের মায়েদের নাকে খত দেওয়ার নির্দেশ দেন। কয়েকজনকে লাঠি হাতে ওই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে দেখা যায় ভিডিওতে।
মায়েদের এভাবে হেনস্তা করায় বিচার চেয়েছেন সন্তানেরা। তাদের দাবি, অপরাধ করে থাকলেও করেছে ভাই। কিন্ত মাকে কেন এমন নির্যাতন করা হলো? প্রশাসনের কাছে বিচার চান তারা।
অভিযোগ প্রসঙ্গে দেলোয়ার হোসেন দেলু বলেন, মাথিয়ারা গ্রামের তফাজ্জল মেম্বারের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে হাঁস, মুরগি চুরির ঘটনা ঘটে। এলাকায় ভাড়াটিয়া একটি পরিবারের দুই কিশোরের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আসে। পরে স্থানীয়দের অনুরোধে বিষয়টি নিয়ে মাথিয়ারা এলাকার খালুর দোকানের সামনে সালিশ বসে। সালিশে ওই দুই কিশোর উপস্থিত হয়নি। তবে তাদের মায়েরা উপস্থিত হন। সালিশে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তখন উপস্থিত মায়েরা শাস্তি ভোগ করতে রাজি হন। এ ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, সামাজিক কিছু পরিবেশ-পরিস্থিতিতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোনো কোনো সময় কাজগুলো করতে হয়।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামসুজ্জামান জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন, এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন।
ফেনী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, হাঁস-মুরগি চুরির একটি ঘটনা সামাজিকভাবে বিচার করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু নাকে খত দেওয়া উচিত হয়নি। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। পরে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ফেনী সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুর রহমান ও সদস্যসচিব আমান উদ্দিন কায়সার সাব্বির স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের দলীয় সব পর্যায়ে পদ স্থগিত করার কথা জানানো হয়েছে।