
উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ধীরগতির জেরে বিদায়ী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে দুই দশকের সবচেয়ে কম। ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে সংশোধিত এডিপির মোট বরাদ্দের ৬৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। এ হার আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ পয়েন্ট কম। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপির অর্থ ব্যয়ের হার ছিল ৮০ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ওয়েবসাইটে ২০০৪-০৫ অর্থবছর থেকে এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য দেওয়া আছে। বিদায়ী অর্থবছরের মত এত কম বাস্তবায়ন হার এই সময়ে আর কোনো বছরে হয়নি।
বুধবার প্রকাশিত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ তথ্য বলছে, এক অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের এ হার গত দেড় দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০ দশমিক ৬৩ শতাংশ; ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৫ দশমিক ১৭ শতাংশ; ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯২ দশমিক ৭৪ শতাংশ; ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮২ দশমিক ১১ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।
এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ; ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ; ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯৪ দশমিক ১১ শতাংশ; ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ; ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯২ দশমিক ৭২ শতাংশ।
তারও আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৯১ শতাংশ; ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৯৩ শতাংশ; ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৯১ শতাংশ ২০১১-১২ অর্থবছরে ৯৯ শতাংশ এবং ২০১০-১১ অর্থবছরে ছিল ৯৬ শতাংশ। বিদায়ি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মূল এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য দেওয়া হয়েছিল ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। তবে এডিপি কাটছাঁট করায় অর্থবছর শেষে এ হার কিছুটা বেড়েছে।সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ২ লাখ ০৫ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার বরাদ্দসহ এডিপিতে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখে বাজেট পাস করেছিল। মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। পরে অন্তর্বর্তী সরকার তা সংশোধন করে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা করে।
বিদায়ী অর্থবছরের প্রথমভাগে রাজনৈতিক অস্থিরতায় উন্নয়ন কাজ ধীর হয়ে পড়লেও ডিসেম্বরে গতি কিছুটা বাড়ে। তবে পরের মাসগুলোতে আবার তা ধীর হয়ে যায়।
অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে তড়িঘড়ি করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের তাড়া দেখা যায়। অতীতের মত কাজ শেষ না করে অর্থছাড়ের প্রবণতা তেমন দেখা না গেলেও মাসের ব্যবধানে বাস্তবায়ন বেশ বেড়েছে। অর্থবছরের শেষ সময়ে অর্থ ছাড় বাড়ার যে প্রবণতা তাও বিদায়ী অর্থবছরে দেখা গেছে, তবে তা আগের তুলনায় কম।
আইএমইডির সবশেষ তথ্য বলছে, একক মাস হিসেবে জুন মাসে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হয় ৪২ হাজার ৪৪৫ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা মোট সংশোধিত এডিপির ১৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুন মাসে এ হার ছিল ২৩ দশমিক ০৯ শতাংশ; খরচ হয়েছিল ৫৮ হাজার ৭৪২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
এক মাস আগেও মে মাসে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হয় ১৭ হাজার ৫৮০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, যা মোট সংশোধিত এডিপির ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মে মাসে এ হার ছিল ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ; খরচ হয়েছিল ২১ হাজার ০৫৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে বাস্তবায়ন বেড়েছে ১১ শতাংশ পয়েন্ট।
এর আগে এপ্রিলে প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হয়েছিল ১০ হাজার ৫৩০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা মোট সংশোধিত এডিপির ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিলে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ; খরচ হয়েছিল ১৭ হাজার ৭০৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে সরকার পতনকে কেন্দ্র করে জুলাই-অগাস্ট জুড়ে জ্বালাও পোড়াওয়ের পর এডিপি বাস্তবায়নে ধস নামে।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেয়। আগের সরকারের নেওয়া অনেক প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়া হয়। এতে চলমান অনেক প্রকল্পের কাজও স্থবির হয়ে যায়। এসব মিলিয়ে এডিপির বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় কমে যায় বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য। সাধারণত অর্থবছরের প্রথমদিকে এডিপির ব্যয়ের পরিমাণ কম থাকে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবার তা আরও কমে গেছে।
একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ী নীতির প্রভাবও পড়েছে এডিপি বাস্তবায়নে। সরকার কম ব্যয়ের দিকে ধাবিত হয়ে এটি কাটছাঁটও করেছে। সংশোধিত এডিপিতে টাকার অঙ্কে কমানো হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
এদিকে নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। স্বাধীনতার পর আগের অর্থবছরের তুলনায় বাজেটের আকার ছোট হওয়ার রেকর্ড এবারই প্রথম। এর মধ্যে এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম