
প্রতীকী ছবি
গণ-অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক ঘটনাবলিতে পালিয়ে যাওয়া ১ হাজার ৫২০ বন্দিকে কারাগারগুলোতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ফিরিয়ে আনাদের মধ্যে ১ হাজার ১৩০ জনের জামিন হয়েছে। এখনও ৭২১ বন্দি পলাতক। এ ছাড়া দেশের পাঁচ কারাগার থেকে খোয়া যাওয়া ২০ আগ্নেয়াস্ত্র (চায়নিজ রাইফেল ও শটগান) এখনও উদ্ধার করা যায়নি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্ধর্ষ বন্দিরা বাইরে থেকে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করতে পারেন, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ হতে পারে।
কারা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে ও পরে দেশের কয়েকটি কারাগারে বন্দীরা বিশৃঙ্খলা করেন। এ সময় দেশের পাঁচ কারাগারে চরম বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহ করে ২ হাজার ২৪০ বন্দী পালিয়ে যান। হামলাকারীরা কারাগার থেকে ৯৪টি শটগান ও চায়নিজ রাইফেল লুট করেন। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ছয় বন্দী মারা যান।
পলাতক বন্দিদের মধ্যে জঙ্গি, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, যাবজ্জীবন, বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পাওয়াসহ বিচারাধীন মামলার আসামি রয়েছেন। তাদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ২০৩ জন। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, অস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে।
কারা অধিদপ্তরের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পলাতক বন্দীদের খুঁজে পাচ্ছে না। ধারণা করা হয়েছে, তারা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই হাজার হাজার লোক ফটক ভেঙে নরসিংদী জেলা কারাগারে ঢুকে পড়েন। তারা কারাগারের সেলগুলো খুলে দেন এবং আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় ৯ জঙ্গিসহ ৮২৬ বন্দী পালিয়ে যান।
নরসিংদী জেলা কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. শামীম ইকবাল বলেন, ঘটনার পর প্রশাসন ঘোষণা করে, যাঁরা আত্মসমর্পণ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না। তখন ৬৪৬ বন্দী আত্মসমর্পণ করেন। এ ছাড়া ৩ জঙ্গিসহ ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখনও ১৪২ বন্দি পলাতক।
কারা কর্মকর্তা শামীম ইকবাল আরও বলেন, কারাগারের অফিসের অনলাইন সিস্টেম ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। ফলে পলাতক বন্দীদের বিষয়ে তাদের কাছে বিস্তারিত তথ্য নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারা অধিদপ্তরের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পলাতক বন্দিদের খুঁজে পাচ্ছে না। ধারণা করা হয়েছে, তারা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন।
কারাগার সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তরা প্রধান ফটক ভেঙে গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা কারাগারের ভেতর তৃতীয় তলার একটি গুদাম ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। তারা বন্দীদের ফাইলপত্র নষ্ট করে। হুড়োহুড়ি করে পালাতে গিয়ে ছয় বন্দী মারা যান। ওই কারাগার থেকে ২০২ জন বন্দি পালিয়ে যান। তাদের অধিকাংশ জঙ্গিবাদের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় কারাগারে ছিলেন।
কারা সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় কয়েকশ দুর্বৃত্ত সাতক্ষীরা কারাগারের সীমানাপ্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকে পড়ে। পরে তারা প্রধান ফটকের তালা ভেঙে কারাগারে ঢুকে তালা ভেঙে ৫৯৬ বন্দীকে বের করে নিয়ে যায়।
সাতক্ষীরা জেলা কারাগারের কারা তত্ত্বাবধায়ক দেব দুলাল কর্মকার বলেন, এখন পর্যন্ত ৫২৯ বন্দি আত্মসমর্পণ করেছেন। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পালিয়ে যাওয়া ২৩ বন্দিকে গ্রেপ্তার করেছে। এখন ২ নারীসহ ৪৪ বন্দি পলাতক।
৫ আগস্ট বিকেলে দুর্বৃত্তরা শেরপুর জেলা কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। ওই সুযোগে কারাগারে থাকা ৫১৮ বন্দি পালিয়ে যান। এ সময় দুর্বৃত্তরা ওই কারাগার থেকে ৯টি আগ্নেয়াস্ত্র (৫ চায়নিজ রাইফেল ও ৪টি শটগান) লুট করে নিয়ে যায়।