স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:৪৬ | আপডেট: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:১৯
ঢাকা: বাংলাদেশে ৩৮ ধরনের ক্যানসারের রোগী সন্ধান পাওয়া গেছে। এরমধ্যে— স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালি এবং জরায়ুমুখের ক্যানসার রোগীর সংখ্যাই বেশি। দেশে লাখে আক্রান্তের সংখ্যা ১০৬ জন। মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশই ক্যানসারে। প্রতিবছর নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন ৫৩ জন।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৃহত্তর গবেষণার ফলাফল থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এদিন, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে ‘বাংলাদেশে ক্যানসারের বোঝা: জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রধান গবেষক ও পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান। তিনি জানান, ক্যানসার বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি। বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি (পিবিসিআর) না থাকায় প্রতিবেশী দেশগুলোর তথ্য ব্যবহার করে ক্যানসারের পরিস্থিতি অনুমান করতে হয়। ফলে বাংলাদেশে ক্যানসারের সঠিক পরিস্থিতি জানার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা আছে। তাই জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিস্থিতি নির্ণয় করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়ে আসছে।
ড. মো. খালেকুজ্জামান জানান, ২ লাখ মানুষের ওপর এ গবেষণা পরিচালন করা হয়। বাংলাদেশে ৩৮ ধরণের ক্যানসার রোগী পাওয়া গেছে। প্রতি লাখে আক্রান্ত ১০৬ জন। ৯৩ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৭৫ বছর। রোগীদের মধ্যে ২.৪ শতাংশ শিশু রয়েছে। ৫.১ শতাংশের বয়স ৭৫ বছরের বেশি। পুরুষদের ৫টি প্রধান ক্যানসার হল শ্বাসনালী, পাকস্থলী, ফুসফুস, মুখ ও খাদ্যনালীর ক্যানসার। নারীদের স্তন, জরায়ুমুখ, মুখ, থাইরয়েড এবং ওভারি। পুরুষ ক্যানসার রোগীদের ৭৫.৮ শতাংশ ধুমপায়ী, ৪০.৫ শতাংশ ধোঁয়াহীন পান, জর্দ্দা, তামাক সেবনকারী। ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ৬০.৬ শতাংশ নারী ধোঁয়াহীন পান, জর্দ্দা, তামাক সেবনকারী। ৪৬ শতাংশের সঙ্গে ই-তামাক সেবনের সম্পর্ক রয়েছে।
ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ কমবাইন্ড চিকিৎসা নিয়েছে এবং ৭.৪ শতাংশ রোগী কোনো চিকিৎসাই নেয়নি। দেশে মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশ ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী। মৃত রোগীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ফুসফুস, শ্বাসনালী ও পাকস্থলীর ক্যানসার। প্রতি বছর নতুন করে প্রতি লাখে ৫৩ জন রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ফুসফুস, লিভার ও শ্বাসনালীর ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা বেশি।
গবেষণায় প্রাথমিকভাবে ২০১,৬৬৮ জন অংশগ্রহণকারী ৪৬,৬৩১টি পরিবারের মধ্যে থেকে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত হন, যার মধ্যে ৪৮.৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৫১.৬ শতাংশ নারী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, নিত্যনতুন জ্ঞান তৈরিতে গবেষণার বিকল্প নাই। বিএসএমএমইউ থেকে সেই গবেষণায় পরিচালনা করা উচিত যা রোগীদের কল্যাণে কাজে আসে। যেসকল গবেষণা দেশের মানুষের, দেশের রোগীদের উপকার হবে সেক্ষেত্রে সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ জাকির হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক।
বাংলানিউজবিডিহাব/এমএইচ/এসআর