ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৭
ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ভেজাল জর্দা কারখানা। এতে নামে-বেনামে তৈরি হচ্ছে হরেক রকমের জর্দাসহ পান-মসলা। আর এসব বানানো হচ্ছে ‘ধানের খড়’ দিয়ে। তামাক পাতার সঙ্গে খড় আর সুগন্ধি ব্যবহার করে তৈরি করা জর্দা ও পান-মসলা মিলছে হাট-বাজারে। কিনছেন ক্রেতারা। স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্নক ঝুঁকি এসব জর্দা ও পান-মসলা উৎপাদন বন্ধে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের নজরদারি নেই। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এখনই ব্যবস্থা না নিলে মারাত্নক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বেন অনেকেই।
সদর উপজেলার গড়েয়া সড়কের পাশে ভাঙ্গাপুল নামক এলাকায় গড়ে উঠেছে মেসার্স শরিফ কেমিক্যাল ওয়ার্কস। দেখে বুঝার উপায় নেই এটি জর্দার কারখানা। নেই সাইনবোর্ডও। কারখানার ভেতরে ঢুকে দেখা গেছে জর্দা তৈরির কেমিক্যালসহ নানা উপকরণ। তাদের উৎপাদিত জর্দার কৌটায় বিভিন্ন নাম দিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার বিভিন্নস্থানে গড়ে উঠেছে পাঁচটি জর্দা ও পান-মসলা কারখানা। কোনো কোনো কারখানা অব্যাহতভাবে ৫-৭ বছর ধরে উৎপাদন করে আসছে ভেজাল জর্দা ও পান-মসলা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জর্দা করাখানায় পান-মসলায় উপরকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ধানের খড়। এসব তৈরি করে কৌটায় ভরে বাজারজাত করতে প্রস্তুত করছে শ্রমিকরা। প্রতিদিন বিক্রয় কর্মীরা ভ্যান ভরে বাজারের দোকানে দোকানে নিয়ে যাচ্ছে তাদের উৎপাদিত ভেজাল জর্দা ও পান-মসলা।
হাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অবৈধভাবে গড়ে উঠা ভেজাল জর্দা কারখানায় উৎপাদিত জর্দা আর পান-মসলা হাত বাড়ালেই মিলছে ঠাকুরগাঁওশহরসহ গ্রামের বিভিন্ন হাট-বাজারে। যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
পৌর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সমবায় মার্কেটে পান ও জর্দা কিনতে আসা হালিমা বেগম বলেন, জর্দার আসল-নকল চিনিনা। এসব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি তা জানি। অভ্যাস হয়ে গেছে, এখন আর ছাড়তে পারছিনা। পান-জর্দা খাওয়ায় এখন আর কোনো ওষুধ শরীরে কাজও করে না। জর্দা ও সিগারেটের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ। বাজারে না পাওয়া গেলে খাওয়া বন্ধ করা যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, মানুষ কি খাচ্ছেন তা জানে না। না জেনেই খাচ্ছে। পান-মসলায় ব্যবহার করা হচ্ছে ধানের খড়। এতে মারাত্নকভাবে স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁওয়ে তামাক বিরোধী কাজ করেন বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘এসো জীবন গড়ি’র নির্বাহী পরিচালক মো. নবেল ইসলাম শাহ বলেন, দিন দিন তামাকের ব্যবহার বাড়ছে। এসব বন্ধে দ্রুত প্রদক্ষেপের দাবি জানান তিনি।
জর্দা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস শরিফ কেমিক্যাল ওয়ার্কসের মালিক শরিফুল হক বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে এ ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠান জর্দা উৎপাদন করছে। যার কোনো বৈধতা ছিল না। আমি এসে বৈধ করেছি। আমি সরকারকে ভ্যাট, ট্যাক্স দেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল কবির বলেন, এটা স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ, আমাদের কাজের মধ্যে পড়ে না।
ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. নূর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কারখানা নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ ঠাকুরগাঁও বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, পান-মসলা ও জর্দা— শিল্পের মধ্যে পড়ে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, সরকারের নিয়ম উপেক্ষা করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জর্দা সহজলভ্য ধোঁয়াহীন তামাকজাত পণ্য, জর্দা ব্যবহার প্রাণঘাতী নেশা। এটি মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে ক্যানসারের জন্য দায়ী ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। পান পাতার সঙ্গে জর্দা ও পান-সমলা খায় অনেকেই। জর্দা ও পান-মসলা ব্যবহার রোধ ও ভেজাল কারখানা বন্ধে কার্যকর প্রদক্ষেপ চান ঠাকুরগাঁওয়ের সচেতন মহল।
বাংলানিউজবিডিহাব/এসআর
জর্দা
ঠাকুরগাঁও
ধানের খড় দিয়ে জর্দা
পান-মসলা
স্বাস্থ্য ঝুঁকি