ধামরাইয়ে মাজার ভাঙার ঘটনায় ৮০০ জনের নামে মামলা – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



ঢাকার ধামরাইয়ে একটি মাজারে ৬৬তম ওরশ চলাকালে প্রথমে সেটির কার্যক্রম বন্ধ ও পরবর্তীতে সেটি ভেঙে দিয়েছে একদল মুসল্লি। এ ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতার কারণে শুকুর আলীর দুই ছেলে তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গা চলে গেছেন। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) এ ঘটনায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৭০০ থেকে ৮০০ ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ধামরাই থানায় একটি মামলা করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের অর্জুন নালাই গ্রামে প্রয়াত শুকুর আলী শাহ ফকিরের (রহ.) মাজারে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙচুরের ঘটনায় ধামরাই ওলামা পরিষদ ও ধামরাই ইমাম পরিষদের নেতাকর্মীসহ বেশ কয়েকটি মসজিদ ও মাদ্রাসার লোকজন উপস্থিত ছিল।

ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার মাজারটিতে ৬৬তম ওরশ আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণ শেষে রাতে বাউল গান হওয়ার কথা ছিল। তবে বিকালের দিকে ধামরাই ওলামা পরিষদ ও ইমাম পরিষদের নেতৃত্বে একদল মুসল্লি মাজারের কয়েক গজ দূরের পার্শ্ববর্তী অর্জুন নালাই জামে মসজিদে জড়ো হন। তারা ওরশ ও গানের আয়োজন বন্ধের দাবি জানান। রাত ৮টার দিকে পুলিশ এসে মুসল্লিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় ওরশ সংশ্লিষ্টদের ওরশের আয়োজন বন্ধের কথা জানালে তারা ওরশ বন্ধ করেন। তবে এরপর মুসল্লিরা ওরশের আয়োজকদের গ্রেপ্তার ও মুচলেকা নেওয়ার দাবি জানান। পুলিশ তাতে সায় দেয়নি। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ সময় মুসল্লিদের নেতৃত্ব দেওয়া ইমামরা এই মাজার চিরতরে বন্ধের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করবেন জানিয়ে মসজিদ ত্যাগ করেন। এরপর রাত ১০টার দিকে সেখানে উপস্থিত অন্য ৫০ থেকে ৬০ জন মুসল্লি দলবেঁধে মাজারটিতে ঢুকে মাজার ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। সেখানে থাকা দুটি কবরসহ বসতবাড়ির একটি টিনের ঘর সম্পূর্ণ ভাঙচুর ও অপর একটি ঘরের বেড়ার টিন ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মাজার সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাসিন্দারা প্রাণ ভয়ে বাড়িটি ত্যাগ করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে বহিরাগত শতাধিক মুসল্লি মসজিদে জরো হন। এরপর তারা মাজারে গান বাজনা বন্ধ করতে বলেন। স্থানীয় বেশ কিছু লোকও ছিলো সেখানে। তারা মসজিদের মাইকে ওই মাজারে সেজদা দেওয়া, মান্নত করা, পীরকে সেজদা করা চলবে না বলে স্লোগান দেয়। রাত ১০টার দিকে ৫০-৬০ জন মুসল্লি গিয়ে মাজার ভেঙে ফেলেন।

প্রয়াত শুকুর আলীর স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, মাজারে মোমবাতি আর আগরবাতি জালাইতাম। বহু বছর ধইরা ওরশ হয়। গতকাল মুসল্লিরা নিষেধ করছিল ওরশ করতে আমরা বন্ধ করছিলাম। এরপর রাইতে ৫০ থেকে ৬০ লোক আইসা মাজার, ঘর ভাইঙ্গা দিছে। ওরা আমারে মারতে চাইলে মারুক। ভয়ে পোলারা বউ পোলাপান নিয়া চইলা গেছে। পুলিশ আইছিল কইছে মামলা করতে আমরা মামলা করলে মামলা চালামু কেমনে।

ধামরাই উপজেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি মুফতি সানাউল্লাহ বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আসে ওই বাড়িতে মাদক কারবারিসহ অনৈতিক কর্মকান্ড হয়। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হতে গতকাল ধামরাই উপজেলা ইমাম পরিষদ ও আমাদের কয়েকজন নেতারা ওই বাড়ির পাশেই একটি মসজিদে জড়ো হই। আমাদের মূল লক্ষ ছিল গান বাজনা বন্ধ করা। ভাঙচুর কোনো সমাধান না। যখন পুলিশের কাছে তারা ওরস বন্ধ করা হয়েছে জানায় তখন আমরা এশার নামাজ শেষে চলে আসি। এরপর শুনেছি স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তাদের ক্ষোভ থেকে মাজার ভেঙেছে বলে শুনেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছিলাম ভাঙচুর নয়।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে আক্কাস আলী নামে একজন বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। এছাড়াও ঘটনার পরপর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে, ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

  • ধামরাই
  • মাজার ভাঙা
  • মামলা
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।