নতুন শিক্ষাবর্ষে তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে ‘আমাদের চার নেতা’ নামে একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে চার নেতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি বইয়ে তাদের প্রত্যেকের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
অন্যান্য শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকেও ইতিহাস বিষয়ের কিছু সংযোজন-বিয়োগ করা হয়েছে। গত বছর ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি’ বইয়ে ‘আমাদের জাতি’ শীর্ষক অধ্যায়টি এ বছরের পাঠ্যপুস্তকে নেই। এ ছাড়া বাংলা ও ইংরেজি বইয়েরও পরিবর্তন হয়েছে। বেশ কিছু গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস এবং কবিতা বা বিষয়বস্তু বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের প্রতিপাদ্য নিয়ে কিছু নতুন গল্প ও কবিতা রাখা হয়েছে। এই গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতিও পাঠ্যপুস্তকে স্থান পেয়েছে।
বুধবার থেকে শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর, নতুন পাঠ্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে এবং 2012 সালের পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য এনসিটিবি ৪১ জন বিশেষজ্ঞ নিয়ে ৪৪১টি পাঠ্যপুস্তক সংশোধিত করেছে। এটিতে অনেক বিষয়বস্তু সংযোজন এবং মুছে ফেলা হয়েছে।
কয়েকদিন আগে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান পাঠ্যবই পরিবর্তন নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, এবার বাংলা-ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে জুলাই বিপ্লবের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। আর অন্যান্য বীরাঙ্গনারা এর আগে মুক্তিযুদ্ধে অবহেলিত হয়েছেন। এবারও তাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর অতিরঞ্জন পরিহার করা হয়।
যেমন স্বাধীনতার ঘোষণা বইটিতে আছে
পঞ্চম শ্রেণির নতুন বই ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ শীর্ষক ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ শিরোনামের অধ্যায়ের প্রথম অংশে রয়েছে নির্যাতিত জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ছবি। পাশেই রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। এরপর রয়েছে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানের ছবি। পুরনো বইয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ছবি ছিল একই জায়গায়।
নতুন পাঠ্যপুস্তকে স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয় সংশোধন করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণীর এই নতুন বইতে, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বারা গণহত্যা’ শিরোনামের একই অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘…পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই আক্রমণের নাম দিয়েছে “অপারেশন সার্চলাইট”। সেই রাতেই গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর ২৭শে মার্চ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আবার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ।
একই বিষয়ের আগের একটি বইয়ে এই অংশটি ছিল, ‘…পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর এই হামলার নাম দিয়েছে “অপারেশন সার্চলাইট”। সেই রাতেই গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ ভোরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
চতুর্থ শ্রেণীর ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি’ পাঠ্যপুস্তকেও স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয় রয়েছে। এই বইটিতে ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ’ শিরোনামের লেখাটিতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবির পাশাপাশি মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার ছবিও রয়েছে।
ছাপা বইয়ে শহীদের নাম ভুল, অনলাইনে সংশোধন
পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ে ‘আমরা মুখ ভুলব না’ শিরোনামের প্রবন্ধটি আজ থেকে প্রায় 200 বছর আগে, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা শহীদ মীর নিসার আলী তিতুমী থেকে শুরু করে গণহত্যা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে শহীদদের স্মরণ করা হয়। এই বছরের জুলাই মাসে বিদ্রোহ। জুলাই বিদ্রোহের শহীদ আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমানের ছবিও এতে যুক্ত করা হয়েছে। তবে মুদ্রিত বইয়ের এ অংশে কয়েকজন শহীদের নামের পাশাপাশি ‘নাহিয়ান’ নামে একজনের নামও ছাপা হয়েছে। তবে ভুল ধরা পড়ায় ‘নাফিসা’ নামটি সংশোধন করে এনসিটিবি ওয়েবসাইটে দেওয়া পাঠ্যপুস্তকের অনলাইন সংস্করণে যুক্ত করা হয়েছে।
পাঠ্যপুস্তকে জুলাই বিদ্রোহের গ্রাফিতি
বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তকে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছে। আর এতদিন ধরে চলমান পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তার উদ্ধৃতি মুছে ফেলা হয়েছে। তবে আগের মতোই চিরন্তন বার্তা বইয়ের পেছনের পাতায়। যেমন, প্রথম শ্রেণীর বাংলা বইতে (আমার বাংলা বইয়ের পেছনের পাতায় জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি আছে সেই সাথে আগের মতো ‘প্রবীণদের সম্মান করো’ কথাটি আছে।
সূত্র: প্রথম আলো