দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট বন্ধের দাবিতে ‘তৌহিদী জনতা’র সঙ্গে আয়োজক কমিটির সদস্যদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বেলা ৩টায় উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের বাওনা অস্থায়ী মাঠে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত রায়। এক পর্যায়ে ফুটবল টুর্নামেন্ট বন্ধের ঘোষণা দেয় উপজেলা প্রশাসন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘বাওনা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের’ উদ্যোগে এলাকায় ‘প্রমীলা ফুটবল টুর্নামেন্টের’ আয়োজন করা হয়। টিকিট কেটে এই খেলা দেখতেন ফুটবল প্রেমীরা।
দুপুরের পর খেলা বন্ধের দাবিতে ‘তৌহিদী জনতার’ ব্যানারে একদল লোক বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে অস্থায়ী ওই মাঠে যান। সেখানে পৌঁছামাত্র আয়োজক কমিটির লোকজনের সঙ্গে তাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
খবর পেয়ে ইউএনও অমিত রায়, দিনাজপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (হাকিমপুর-ঘোড়াঘাট সার্কেল) আ ন ম নিয়ামত উল্লাহ, হাকিমপুর থানার ওসি মো. সুজন মিঞা, পরিদর্শক (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলমসহ পুলিশের একটি দল সেখানে গিয়ে দুপক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে পরিবেশ শান্ত করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতিতে দুপক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
তৌহিদী জনতার পক্ষে আব্দুল আলীম অভিযোগ করে বলেন, খেলা বন্ধের দাবিতে প্রথমে উপজেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেই। খেলা চলবে না বলে প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দেয়। কিন্তু মঙ্গলবার আবার তারা খেলা চালু করার জন্য এলাকায় মাইকিং করে এবং জেলা প্রশাসকের অনুমতি দিয়েছে বলে মিথ্যা প্রচার করে। দুপুরের পর মিছিল নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশ আমাদের শান্ত থাকতে বলে। এর মধ্যে প্রশাসনের উপস্থিতিতে আয়োজক কমিটির লোকজন আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে আমাদের গালিব, আব্দুর রহমান, রায়হানসহ সাতজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
অপর দিকে আয়োজক কমিটির পক্ষে রাকিবুল হাসান বলেন, কেন প্রমীলা ফুটবল খেলা হবে না। বিদেশের মাটিতে এই প্রমীলা ফুটবলাররাই বিজয়ী হয়ে দেশের সুনাম কুঁড়িয়েছেন। তৃণমূল থেকে খেলেই তারা জাতীয় পর্যায়ে খেলছেন। প্রশাসন কেন এ খেলা বন্ধ করতে বলে, ‘তৌহিদী জনতার’ নামে এক দলকে সহযোগী করে, ভাবতে অবাক লাগে। দেশ কি তালেবান হয়ে গেল?
‘বাওনা যুব সমাজ ক্লাব’ এর উপদেষ্টা জিয়া মাস্টার সাংবাদিকদের বলেন, ফুটবল খেলা সব জায়গায় হচ্ছে। প্রমীলা ফুটবলে এখন সবাই আগ্রহী। এই খেলা কেন বন্ধ করতে হবে এবং হামলা করতে হবে আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা খেলার আয়োজন করে কোনো অপরাধ করিনি।
ইউএনও অমিত রায় বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। সেইসঙ্গে জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া ওই মাঠে প্রমীলা ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে না।
সহকারী পুলিশ সুপার নিয়ামত উল্লাহ বলেন, অনুমতি ছাড়া এখানে প্রমীলা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়েছিল। সময়মতো না গেলে বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারত। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।