পাঁচ বছর ধরে পড়ে আছে প্রকল্পের আবাসিক ভবন ও যন্ত্রপাতি

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo

খুলনার শহিদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল – ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা: প্রায় পাঁচ বছর ধরে পড়ে আছে প্রকল্পের আবাসিক ভবন ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। খুলনার ‘শহিদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ’ প্রকল্পে বিরাজ করছে এমন অবস্থা। এগুলো কেন পড়ে আছে এবং এর পেছনে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে বাস্তবায়ন,পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।

জানা যায়, সূদুর প্রসারি কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই পতিত আওয়ামীলীগ সরকার আমলে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল।। ফলে নির্ধারিত সময় থেকে প্রায় ৫ বছর বেড়ে যায় মেয়াদ এবং বাড়ে ব্যয়ও।

সম্প্রতি বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সমাপ্ত প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য

আইএমইডি বলেছে, প্রকল্পের আওতায় সৃষ্ট আবাসিক ইউনিট গুলোর মধ্যে প্রায় তিন-চতুথাংশই (পরিচালক) এবং উপ-পরিচালকের বাংলোসহ ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর (হস্তান্তরের তারিখ) থেকে অব্যবহৃত থাকায় উদ্দেশ্য অর্জন মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। পাশাপাশি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সামগ্রী অযত্নে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। বিষয়টি উদ্যেগী মন্ত্রণালয় (স্বাস্থ্য) যথাযথ তদন্ত করতে পারে। এছাড়া জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে,আইএমইডিকে অবহিত করার কথা ছিল। কিন্তু সেটি হয়নি।

আইএমইডির সাবে সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বাংলানিউজবিডিহাবকে বলেন, অতীতে আমাদের দেশে প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সুনিদিষ্ট কোন পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। ফলে তারই প্রতিফলন এসব প্রকল্পে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষা করেই প্রকল্প নিচ্ছে। এটা ভালো দিক।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্পের এমন অবস্থার জন্য প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি থেকে বাস্তবায়ন সব পর্যায়ে যারা জড়িত ছিলেন তারাই দায়ী। সমাপ্ত প্রকল্প মূল্যায়নের ফলে যে কাজটি হয় সেটি হলো, ওই প্রকল্পের ভুলক্রুটিগুলো যাতে ভবিষ্যতে নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে আর না থাকে।

আইএমইডি জানায়, ‘শহিদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল সম্প্রসারণ, খুলনা’ প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ৫৭ কোটি ৯২ লাখ ১৮ হাজার টাকা। পরে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৬২ কোটি ১৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। এছাড়া অনুমোদিত মেয়াদ ছিল ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত দুই বছর। কিন্তু পরে দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। ফলে প্রায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় চলে যায় প্রায় সাড়ে ৭ বছর।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, প্রকল্পটির ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) উদ্দেশ্য গুলো সুর্নিদিষ্ট নয় এবং কার্যক্রমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ভবিষ্যতে এ সমজাতীয় প্রকল্প দলিল তৈরির ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য নির্ধারণে আর ও যত্নবান হতে হবে। ডিপিপি প্রণয়ন সংক্রান্ত নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এটেন্ডন্স ডরমেটরি বিল্ডিং এবং গ্যারেজ কাম আনসার ব্যারাক বিল্ডিং দুটি সামনের রাস্তা থেকে নীচু হওয়ায় বিল্ডিং দুটির প্রবেশ পথে পানি জমে যায়। এ সমস্যা নিরসনে গণপূর্ত অধিদপ্তর দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রকল্পটির সিভিল অডিট এখনও হয়নি, সিভিল অডিট সম্পাদনের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী খুলনা এবং শহিদ শেখ আবু নাসের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দ্রুত উদ্যেগ নিতে হবে।

প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হিসাবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু করা হয়নি। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। তবে সার্বিকভাবে সব প্রকল্পের বিষয়ে প্রতিরবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক যাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের ক্ষেত্রে ম্যাচিং ফান্ডের অভাব ছিল। অনুমোদিত ডিপিপি ও কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কেনাকাটা কার্যক্রম করতে না পারায় বিভিন্ন পণ্যের বাজার দর বৃদ্ধি পায়। প্রকল্পের ডিপিপি তৈরির সময় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন পর্যায়ে বিভিন্ন ঝুকি নির্ধারণা করা হয়নি। প্রকল্প নেওয়ার সময় সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা না করে এবং ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা না করে ডিপিপি তৈরি করা হয়। এর ফলে পরবর্তীতে কাজের পরিধি বেড়ে যায়, ফলশ্রুতিতে ব্যয় বৃদ্ধি পায়। বার বার মেয়াদ বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য দাম বেড়ে যায় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে দরপত্রের রেট শিডিউল পরিবর্তন হয়ে যায়, ফলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায়। এছাড়া জটিল ও ব্যতিক্রমধর্মী কাজের ক্ষেত্রে অনেক সময় টার্ণকী ঠিকাদারের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা বেড়ে যায় এবং চুক্তি স্বাক্ষরের সময় সকল শর্তগুলি সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনা করা হয় না। তাই টার্ণকী ঠিকাদার বিভিন্ন সময় বাড়তি বিল দাবি করার সুযোগ পায়।

প্রকল্প পরিচালক জানান, অধিগ্রহণ করা জমি পাওয়ার প্রায় ৬ মাস বিলম্ব হয়েছে। ডিপিপিতে সব অঙ্গের কাজকে একটি প্যাকেজে দেখানো হয়, যা পরবর্তীতে আলাদা আলাদা প্যাকেজ সংশোধন করতে হয়। সব অঙ্গ ভবনের স্থাপত্য ও কাঠামো নকশা এক সঙ্গে পাওয়া যায় নি।

বাংলানিউজবিডিহাব/জেজে/আরএস

খুলনার ‘শহিদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ’ প্রকল্প

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।