
আষাঢ়ের টানা বৃষ্টিতে পাইকগাছায় আমন আবাদের বীজতলা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ধানের আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। বারবার বীজ তলা তৈরির পরও বীজতলা পানিতে তলিয়ে নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অতিবর্ষণজনিত কারণে জলাবদ্ধতায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমন ধানের মৌসুমের শুরুতেই ৩৮৫ হেক্টর জমিতে লাগানো বীজতলা ইতিমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ৬৫ হেক্টর বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা বারবার বীজতলা তৈরি করছে আর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে বীজতলার চারা পচে নষ্ট হচ্ছে। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বর্ষা মৌসুমের মাস আষাঢ়ের প্রথম থেকেই শুরু হয়েছে অতিবৃষ্টি। বিরতিহীনভাবে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে উপজেলার নিন্মাঞ্চল পানিতে ডুবে জলাবদ্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। আর এসব অঞ্চলের কৃষকরা আগাম রোপণের জন্য যে সব বীজতলা তৈরি করেছিল তার অধিকাংশই পানিতে তলিয়ে গেছে। যার ফলে আগাম আমন আবাদে নিয়ে কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে- উপজেলায় আমন ধানের চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ১৫ হাজার ছয়শত হেক্টর জমি। আমন ধানের আবাদের জন্য ইতিমধ্যে বীজতলা তৈরি করেছিল সাড়ে ৩৮৫ হেক্টর জমিতে। জুলাই মাসের শুরুতে অতি বৃষ্টিপাতের কারণে পাইকগাছা পৌরসভাসহ উপজেলার বিল-খাল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আমন ধানের চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে দেখা গেছে- যে সমস্ত বিলে আমন মৌসুমে ধানের আবাদ হয়ে থাকে ওই সকল বিল বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়ে পানি থৈ থৈ করছে। আগামীতে আরো প্রবল বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। বিলের পানিতে কোনো শ্রোত নেই। যার কারণে শুধু আমন ধানের চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমন ধানের চাষের জন্যে যে বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল তাও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলার রাড়ুলী গ্রামের কৃষক মো. সাজ্জাত আলী বলেন, আমার আমনের বীজতলা দুইবার অতিবৃষ্টিপাতের কারণে পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে, তৃতীয় বার বীজ ফেলে বীজতলা তৈরি করছি। আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
চাঁদখালী ইউনিয়ানের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, বিল সমুহ প্লাবিত হয়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এই বিলে আর কোনো ফসল উৎপাদন করা সম্ভব না। এবছর এতো পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে বিলের জমিতে আমন আবাদ অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বিল এলাকার হাজার হাজার কৃষকের জীবনে নেমে আসবে অবর্ণনীয় দদুর্ভোগ।
পাইকগাছা কৃষি অধিদপ্তরের কৃষি অফিসার মো. একরামুল হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়ে বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। চাঁদখালী ইউনিয়ানে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়। বিলের পানি নিস্কাশন না হলে বেশির ভাগ জমি পতিত থেকে যাবে। এতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পুরণ না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষি অফিস থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বীজ ধান দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বীজতলা তৈরি করতে পারলে একটু দেরিতে রোপণ করলে আমন আবাদে খুব বেশি সমস্যা হবে না।