পিঠ বাঁচাতে ‘নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম’ নিয়ে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলামকে ঘিরে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে তাঁর লেখা একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনকে কেন্দ্র করে। ‘নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করা হয় গত ২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিমের উপস্থিতিতে। তবে এই অনুষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকেই।

তাদের মতে, যিনি বিগত সময়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে ফ্যাসিবাদী শাসনের সহচর ছিলেন, শিক্ষার্থীদের রক্তের দায় যার গায়ে লেগে আছে তাঁর বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ব্যক্তির অংশগ্রহণ অত্যন্ত দুঃখজনক। অধ্যাপক আইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, বিগত সরকারের সময় তিনি ছিলেন স্বৈরাচারী সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। শিক্ষক রাজনীতিতে তিনি বারবার ক্ষমতাসীনদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

২০২১ -২২ সালে ছিলেন আওয়ামীপন্থী ‘নীল দলের’ সভাপতি। জুলাইয়ের ছাত্র-গণআন্দোলনের সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং সরাসরি শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেন। এমনকি ছাত্রদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়ে সরকারপন্থী বার্তা দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ, সেই সময়েই শিক্ষার্থীরা রক্তাক্ত রাজপথে বুলেটের মুখে দাঁড়িয়েছিলো গণতন্ত্রের দাবি নিয়ে। ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট আন্দোলন চলাকালে অধ্যাপক আইনুল ইসলাম তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন। শিক্ষার্থীরা যখন নিপীড়নের মুখে, তখন তার সরকারি অতিথি হয়ে গণভবনে উপস্থিত থাকা নিয়ে তখন থেকেই উঠেছিলো নানা প্রশ্ন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় আমরা রাজপথে গুলিবিদ্ধ হচ্ছিলাম, আর অধ্যাপক আইনুল ছিলেন ভেতরে, বিরিয়ানি পার্টিতে। যে উপাচার্য সেই আন্দোলনের মাধ্যমে তৈরি পটভূমিতে দায়িত্বে এসেছেন, তিনিই আজ গণবিরোধী ভূমিকার সহযোগীর বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে উপস্থিত এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। অধ্যাপক আইনুলের অতীত সম্পর্কে আমরা সবাই জানি, অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসক জানেন না এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

অভিযোগ রয়েছে, অধ্যাপক আইনুল ইসলামের প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়ার পেছনে ছিল রাজনৈতিক যোগসাজশ। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের সময় তিনি প্রভাব খাটিয়ে রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পান বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারাকাতের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিতর্কও রয়েছে।

এ বিষয়ে জবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় অধ্যাপক আইনুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ছিলেন এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের পক্ষেই কাজ করেছেন। পাঁচ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা তাঁর মতো সহযোগীদের বিচার চাইলেও প্রশাসনের গাফিলতিতে তা সম্ভব হয়নি। এখন তাঁর বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে ভিসির উপস্থিতি আমাদের হতাশ করেছে। আমরা আরও দায়িত্বশীল আচরণ চাই।

জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। যারা সেই ফ্যাসিবাদী শক্তিকে রক্ষা করেছে, তাদের বিচার চাই। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, এমন ব্যক্তিদের পুনর্বাসন না করে দৃষ্টান্তমূলক দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

অভিযোগে বিষয়ে অধ্যাপক আইনুল ইসলামের কাছে গণভবনে যাওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি স্বীকার করছি গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। প্রশাসনের দায়িত্বে ছিলাম তাই যেতে হয়েছে। তবে রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ ও অন্যান্য বিষয়ে তৎকালীন উপাচার্য বলতে পারবেন আমি ওনাকে প্রভাব খাটিয়ে কিছু করেছি কি না। পরে তিনি ব্যস্ততার অজুহাতে কথা বলা শেষ করেন।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিমের উপস্থিত থাকার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক অনুষ্ঠান তাই আমরা উপস্থিত ছিলাম। তিনি যদি নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে দোষী হন তাহলে আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

  • অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম
  • অর্থনীতি বিভাগ
  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
  • বই
  • মোড়ক উন্মোচন
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।