প্রধান শিক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানোর অভিযোগ – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এক প্রধান শিক্ষকের (ভারপ্রাপ্ত) কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্যের অফিসে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

ওই শিক্ষকের কন্যা ভাবনা আচার্য ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন,  ‘…জানেন, আমরা মেয়েরা বাবার অপদস্থ হওয়ার ভিডিও দেখে রাতে ঘুমাতে পারছি না। ভাবুন উনি শিক্ষক নয় শুধু, উনি আমাদের বাবা। আপনার বাবার সাথে এমন হলে আপনার কেমন লাগবে বলুন!’  

বিদ্যালয়ের নবগঠিত এডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, বুধবার সকালে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ভাটিয়ারীতে জড়ো হয়। পরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে বিদ্যালয়ে গিয়ে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেয় বলে জানান তিনি।

গত সোমবার বিদ্যালয়ের নবগঠিত এডহক কমিটির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব নেন জামায়াত সমর্থিত বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এরপর বিএনপি সমর্থিত সাবেক শিক্ষার্থীরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অপসারণ চেয়ে আন্দোলনে নামে।

এদিকে আজ বুধবার সকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আশ্চার্য ও এডহক কমিটির সভাপতিসহ সদস্যরা অফিসে বসে বিদ্যালয়ের কর্মপরিকল্পনা করছিলেন। এসময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সাবেক শিক্ষার্থীরা মিছিল স্লোগান দিয়ে কয়েকশো নেতাকর্মী বিদ্যালয়ে আসে। এ সময় জামায়াত সমর্থিত কর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। উভয় দলের কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

এ সময় জামায়াতের কর্মী ফারুক আহত হয়। দুপুর ২টার দিকে জোরপূর্বক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্যকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করান বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় শিক্ষকের সঙ্গে তারা অসদাচরণ করেন বলেও জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

পদত্যাগপত্রে বাধ্যতামূলক স্বাক্ষর নেওয়ার সময় অফিসে থাকা ভাটিয়ারী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ার প্রধান শিক্ষককে তার গাড়িতে তুলে বাড়ি পৌঁছে দেন। এ সময় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাকে নানাভাবে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্যকে নিজের শিক্ষক দাবি করে বিদ্যালয়ের নবগঠিত এডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, এভাবে অসম্মান করে এক শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া কাম্য নয়। তিনি অনিয়ম-দুর্নীতি করে থাকলে অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিচার হবে। কিন্তু বাধ্য করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়া সমীচীন নয়।

ভাটিয়ারী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুল আনোয়ার বলেন, বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে মিছিল মিটিং করেছে শুনেছি। তবে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রধান শিক্ষক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পদত্যাগ করেছেন। নিজ গাড়ি করে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্য বলেন, ২০২৮ সালের মার্চ মাসে আমার চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। সাবেক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়েছেন। তা সততার সঙ্গে পালন করে আসছি। নবগঠিত এডহক কমিটি মিটিং করে আমাকে বাদ দিতে পারত। কিন্তু আমাকে অসম্মান করে বাধ্যতামূলক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। যারা এ গর্হিত কাজ করেছে অধিকাংশ আমার ছাত্র ছিল। বলার কিছু নাই। বিচার সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দিলাম।

  • অভিযোগ
  • জোরপূর্বক পদত্যাগ
  • প্রধান শিক্ষক
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।