ফরিদা পারভীনের স্মরণসভায় ‘চুল কেটে’ সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতীকী প্রতিবাদ – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



ময়মনসিংহে জোর করে মানুষের চুল কেটে দেওয়ার সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে ফরিদা পারভীনের স্মরণসভায় ‘চুল কেটে’ প্রতীকী প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরের শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যানের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে এক অনুষ্ঠানের শুরুতে আয়োজক কবি শামীম আশরাফের চুল কেটে প্রতীকী প্রতিবাদ জানানো হয়।

অনুষ্ঠানটি ছিল কিংবদন্তি শিল্পী, লালনকন্যাখ্যাত ফরিদা পারভীনের স্মরণসভা। এর আয়োজন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘পরম্পরা’। অনুষ্ঠানের একটি ব্যানারে লেখা ছিল: ‘আল্লাহ তুই দেহিস: মাজার ভাঙার সংস্কৃতিতে আঘাত, মানুষের ওপর অত্যাচারকারীদের ঘৃণা।’

সম্প্রতি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার হালিম ফকির নামে পরিচিত হালিম উদ্দিন আকন্দকে কয়েকজন ব্যক্তি জোর করে ধরে তার চুল কেটে দেয়। সেই ঘটনার প্রতিবাদে প্রতীকীভাবে আয়োজক ও ‘পরম্পরা’র সভাপতি কবি শামীম আশরাফের চুলও কেটে দেওয়া হয় অনুষ্ঠানের শুরুতেই।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা দু-এক দিন ধরে দেখছি, কয়েকজন মানুষ মিলে একজনের লম্বা চুল কেটে দিয়েছে। তখন তিনি কষ্টে বলেছিলেন—‘হে আল্লাহ, তুই দেহিস।’ আজকের এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা সেই অবিচারের প্রতিবাদ জানাই। মাজার সংস্কৃতির ওপর আঘাত এবং শিল্প-সংস্কৃতির মানুষের ওপর যে অত্যাচার চলছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।

স্মরণসভায় বরইগাছের সঙ্গে ফরিদা পারভীনের ছবি টাঙানো হয়। গাছে ঝুলছিল তাঁর গাওয়া জনপ্রিয় লালনগীতির লাইন: ‘আমি অপার হয়ে বসে আছি’, ‘মিলন হবে কত দিনে’, ‘জাত গেল জাত গেল বলে’, ‘সময় গেলে সাধন হবে না।’ গাছতলায় সাদা কাপড় বিছিয়ে শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন। সকাল ১০টা পর্যন্ত চলে এ আয়োজন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শনার্থীরা জানান, ফরিদা পারভীনের প্রয়াণে জাতি গভীরভাবে শোকাহত। গবেষক স্বপন ধর বলেন, সংকীর্ণতা বারবার এসেছে, কিন্তু মানবতাবাদ সবকিছুকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। লালনের অনুসারীরা পাগল হলেও তাঁরা ঘুষ খান না, মিথ্যা বলেন না, নিজেদের বিক্রি করে দেন না।

শিল্পী খাইরুল ইসলাম বলেন, ফরিদা পারভীন লালনের গানকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর প্রয়াণ আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা তরুণ প্রজন্ম তাঁর গান ও সংস্কৃতি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে কাজ করব।

দর্শক জয়া বর্মণ জানান, পার্কে ঘুরতে এসে এ আয়োজন দেখে মুগ্ধ হয়েছি। আমরা চাই লালনের গান আরও ছড়িয়ে পড়ুক। লালনের গানে জাত-ধর্মের ভেদাভেদ ছিল না। ফরিদা পারভীন সেই গানকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, তরুণ প্রজন্ম যেন তা যুগে যুগে ধরে রাখে।

আয়োজক শামীম আশরাফ বলেন, ময়মনসিংহ শিল্প-সংস্কৃতির নগরী। এত বড় শিল্পীর প্রয়াণে সারাদেশে কোনো আয়োজন হয়নি, তাই আমরা ছোট করে হলেও তাকে স্মরণ করার চেষ্টা করেছি।

  • প্রতীকী প্রতিবাদ
  • ফরিদা পারভীন
  • স্মরণসভা
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।