
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দেয়ালে টাঙিয়ে রেখে আলোচনায় আসা পিরোজপুরের নেছারাবাদ রমেশচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামিমা ইয়াছমিনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে দেয়ালে ছবি টাঙানোর জন্য নয়, অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার কারণে তাঁকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। আজ বৃহস্পতিবার পিরোজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মোস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে এই কথা জানান।
এর আগে গত সোমবার রাতে পিরোজপুর জেলা শিক্ষা অফিস থেকে ওই শিক্ষিকাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে গতকাল বুধবার উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের চিঠিটি পৌঁছে দেওয়া হয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোহাম্মাদ মোস্তফা কামাল বলেন, ছবি টাঙানোর জন্য নয়, বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও এলাকার মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার কারণে ওই শিক্ষিকাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
মোট কথা, সবার সঙ্গে অসদাচরণের কারণে তাঁকে ওই সাজা দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করার জন্য তদন্ত চলছে।
তাহলে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙিয়ে পত্রপত্রিকায় আলোচনায় আসার পরেই কেন তাঁর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা—এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক শামিমা ইয়াছমিনের বিরুদ্ধে আগে থেকে অনেক অভিযোগ শুনেছি। বুঝেছিলাম, সে নিজে থেকে শুধরে যাবে। শুধরায়নি।’
জানতে চাইলে বরখাস্ত শিক্ষক শামিমা ইয়াছমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার অপরাধ সম্পর্কে আমি অবগত নই। বিগত সরকারের আমলে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর ছবি উঠেছে। ছবি নামানোর জন্য নতুন কোনো প্রজ্ঞাপনের কপি বা উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে কোনো নির্দেশনা এলে ছবি নামিয়ে ফেলতাম।
‘পরে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার ফোন পেয়ে ওই ছবি নামিয়ে ফেলেছি। ৫ আগস্টের পর থেকে ছবি সরানোর কোনো নির্দেশনা আসেনি বিধায় ছবি নামাইনি। এখন গতকাল বুধবার দুপুরে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে আমাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের চিঠি হাতে দেওয়া হয়েছে।’
বরখাস্তের চিঠিতে অপরাধের কী কারণ লেখা রয়েছে—জানতে চাইলে শিক্ষিকা বলেন, ‘চাকরিবিধি না মেনে অসদাচরণের কারণে চাকরি থেকে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে।’
বরখাস্তের চিঠি দেখতে চাইলে শিক্ষিকার স্বামী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা লোকাল প্রশাসন খেপাতে চাই না। দেখি ভালোয় ভালোয় সমাধানে আসতে পারি কি না। যদি না পারি, তাহলে সাংবাদিকদের বিষয়টা জানাব।’
‘আমার বিদ্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি সরাতে পারব না’‘আমার বিদ্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি সরাতে পারব না’
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দীন বলেন, ‘বিদ্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামানোর জন্য চিঠি আকারে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে ভেতরে-ভেতরে আমাদের ছবি নামানোর জন্য একটা নির্দেশনা ছিল। আমি আমার ক্লাস্টারের সবাইকে ছবি নামাতে বলেছিলাম। ওই শিক্ষিকা কেন নামায়নি, আমি বুঝি না।’
তাহলে ছবি না সরানোর অপরাধেই কি ওই প্রধান শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চিঠিতে কী লেখা আছে আমি জানি না।’
এ বিষয়ে কথা বলতে নেছারাবাদ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দোকার জসিম আহমেদকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
সূত্র : আজকের পত্রিকা