
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার সময় অন্তর্বর্তী সরকারের নীরবতা নিয়ে লন্ডনে আয়োজিত এক সংলাপে প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সরকার দেশে কী করে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করবে– এমন প্রশ্নে তিনি বললেন, দেশের পরিস্থিতি এখন ‘শান্ত’, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠাই সরকারের ‘এক নম্বর লক্ষ্য’।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার ছয় মাস পূর্তির দিন– এ বছর ৫ ফেব্রুয়ারি ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করে রীতিমত উৎসবের আমেজে বাংলাদেশের নানা ঐতহাসিক ঘটনার স্মৃতিবিজড়িত ওই বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
চার দিনের সরকারি সফরে লন্ডনে অবস্থানরত মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (চ্যাথাম হাউজ) আয়োজিত এক সংলাপে অংশ নিলে সেখানে তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।
প্রবাসী একজন সাংবাদিক বলেন, আপনি যখন ২০২৪ সালের ৭ অগাস্ট ঢাকার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান, তখন আপনি বলেছিলেন যে আপনার প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সবাইকে একত্রিত করা। কিন্তু আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ছয় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সেখানে আমরা প্রশাসনের নীরবতা লক্ষ্য করেছি। এর ভিত্তিতে আপনি নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি বা তাদের সমর্থকদের আলাদা করে দিয়েছেন, বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কীভাবে বাংলাদেশকে সংস্কার করতে চান বা ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে চান—তাদের গ্রহণ না করে?
জবাব দিতে গিয়ে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙা নিয়ে সরাসরি কোনো উত্তর ইউনূস দেননি। তবে উত্তরে তিনি বলেন, এখন সবকিছুই আমরা সামাল দিতে পারছি। এটা এমন এক সময়, যখন আমরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ পার হয়ে এসেছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত, শৃঙ্খলায় এসেছে এবং আমরা এগুলো মোকাবেলা করছি। ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতিকে ‘শৃঙ্খলায় আনা’ ছিল তাদের জন্য ‘বড় একটি কাজ’।
পরিস্থিতি এখন পাল্টেছে দাবি করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভাগ্যক্রমে আমি আপনাকে জানাতে পারি, এখন পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। মানুষ এখন পুলিশকে গ্রহণ করছে। যারা সমস্ত নৃশংসতার সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের চিহ্নিত করে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তারা বিচারাধীন।
ঐক্যের প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য আমাদের এক নম্বর লক্ষ্য। আমরা একসঙ্গে বসছি, আলোচনা করছি, একটি ‘জুলাই চার্টার’ তৈরি করার চেষ্টা করছি। এটা সহজ কাজ নয়—সব দলকে একসঙ্গে বসিয়ে আরোচনা করা। কিন্তু আমরা সেটা করছি। এইটাই একটি দেশের জন্য সবচেয়ে বড় ঐক্য হতে পারে।