বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সংস্কার বিষয়ক কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা ও নিন্দা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী বিশিষ্টজনেরা। ‘একাত্তরের প্রহরী’ ব্যানারে তারা একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়- গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই আমরা গভীর পরিতাপের সঙ্গে লক্ষ্য করছি বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত করার হীন প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।
গত সাড়ে পাঁচ মাসে এই হীন প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় আমরা শোকাতুর হৃদয় নিয়ে দেখলাম মুক্তিযুদ্ধের সকল ভাস্কর্য ভাঙা হল, পুড়িয়ে দেওয়া হলো মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি। চরমভাবে অবমাননা করা হল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্য ,আঘাত এল জাতীয় সংগীতের উপর। ধ্বংস করা হল মুক্তিযুদ্ধের যাদুঘর এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল নথিপত্র, পাঠ্যবই পরিবর্তনের উছিলায় বিতর্কিত করা হল মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা। বীরাঙ্গনাদের সর্বোচ্চ ত্যাগকে অস্বীকার করতে গিয়ে অপমানিত করা হল তাঁদের। আর সবশেষে আমরা দেখলাম সম্প্রতি সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের নামে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাহাত্তরের সংবিধানকে বাতিল করে দেবার সুগভীর ষড়যন্ত্র।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়- ১৯৭২ সালে রচিত এ হস্তলিখিত সংবিধান মূলত বাঙালি জাতির এক ঐতিহাসিক দলিল। দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমা এবং রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন এই বাহাত্তরের সংবিধান। এই সংবিধানের মূল চারনীতি শুধু মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকেই বয়ান করে না, বরং হাজার বছরের পলিমাটি অববাহিকায় একটু একটু গড়ে ওঠা অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল বাঙালি সংস্কৃতি- সমাজকেও ধ্রুব হিসেবে বর্ণনা করে। তাই নির্দ্বিধায় বাহাত্তরের সংবিধানকে বাংলাদেশের অকৃত্রিম কাঠামোও বলা যায়।
বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে তাঁরা বলেন, আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, অতিসম্প্রতি সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের নামে সেই শিকড়েই আঘাত করা হয়েছে। লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতিকে মুছে ফেলার মাধ্যমে বাংলাদেশের চিরকালীন কাঠামোতেই মূলত সচেতনভাবে আঘাত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত এবং সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সমবণ্টনে অঙ্গীকারবদ্ধ যে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল সেই বাংলাদেশের সকল সুরকে একতাবদ্ধ করেই রচিত হয়েছিল আমাদের এ সংবিধান। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে সংবিধানের চার মূলনীতির তিনটিকে মুছে দিয়ে তারা মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের মূল চেতনায় কুঠারাঘাত করছেন। আমরা ‘একাত্তরের প্রহরীর’ পক্ষ থেকে এই হীন প্রচেষ্টার প্রতি তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা তীব্র নিন্দা জানাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ভাস্কর্য এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবমাননাসহ ইতিহাসকে বিতর্কিত করার ঘৃণ্য সকল অপ্রচেষ্টার প্রতি।
পরিশেষে আমরা আহ্বান জানাই, বাহাত্তরের সংবিধানকে অপরিবর্তিত রাখা হোক। আমাদের আহ্বান, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসকে বিতর্কিত করার সকল হীন প্রচেষ্টা বন্ধ করা হোক। আমাদের আহ্বান, একাত্তরে বাংলাদেশের সকল মুক্তিকামী জনতার বলিদানকে স্মরণে রেখে বাংলাদেশকে পরিচালনা করা হোক। একই সাথে সকল প্রকার নিপীড়ন অনতিবিলম্বে বন্ধ করা হোক
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী বিশিষ্টজনেরা হলেন মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী, সমাজচিন্তক বেলাল বেগ, মুক্তিযোদ্ধা ড. জিনাত নবী, মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম, অধ্যাপক ড. হাসান মামুন, বিজ্ঞানী ড. নাহিদ বানু, লেখক ও রাজনীতিবিদ ড. দিলিপ নাথ, রাজনীতিবিদ রাফায়েত চৌধুরী, অধ্যাপক ড. দেলোয়ার আরিফ, অধ্যাপক ড. কামরুন নাহার নীরু, কবি ফকির ইলিয়াস, লেখক ও অভিনয়শিল্পী লুৎফুন নাহার লতা, সাংস্কৃতিক সংগঠক মিথুন আহমেদ, লেখক ও সংগঠক মিনহাজ আহমেদ, সাংস্কৃতিক সংগঠক এ্যানি ফেরদৌস, আবৃত্তিকার ড. বিলকিস রহমান দোলা, সংগঠক ও বাচিকশিল্পী জি এইচ আরজু , সংস্কৃতিকর্মী সিসিলিয়া মোরাল, বাচিকশিল্পী সাবিনা নীরু, বাচিকশিল্পী তাহরিনা প্রীতি, সংগঠক স্বিকৃতি বড়ুয়া, গোপাল স্যানাল, সাংবাদিক পিনাকী তালুকদার, বাচিকশিল্পী গোপন সাহা বাচিকশিল্পী, লেখক ও সংগঠক আবু সাঈদ রতন, কবি ফারহানা ইলিয়াস তুলি, বাচিকশিল্পী স্বাধীন মজুমদার, লেখক ও সংগঠক খালেদ সরফুদ্দিন, ছড়াকার মনজুর কাদের, চলচ্চিত্রনির্মাতা রওশন আরা নীপা, নাট্যশিল্পী মিল্টন আহমেদ, লেখক মিশুক সেলিম, কবি ও নাট্যশিল্পী আনোয়ার সেলিম, সমাজকর্মী জয়তূর্য চৌধুরী, লেখক
স্মৃতি ভদ্র প্রমুখ।