বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুন, সর্বশেষ যা জানা গেল – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে গতকাল শনিবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। আগুনে কার্গো ভিলেজের আমদানি কমপ্লেক্সের পুরোটাই পুড়ে গেছে। এই ঘটনায় বেলা সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের সব উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ থাকে। যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।

ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিটের চেষ্টাতেও রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত আগুন পুরো নেভেনি। আহত হয়েছেন ২২ জন। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। আমদানিকারকেরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। বিমানবন্দরের ভেতরে নজিরবিহীন এই অগ্নিকাণ্ডকে অনেকে রহস্যজনক বলছেন।

অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সরকার তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। ঘটনা তদন্তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সাত সদস্যের ও কাস্টমস পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দরের সূত্র জানায়, বেলা সোয়া ২টার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্স ভবনে আগুনের সূত্রপাত হয়। এটি বিমানবন্দরের ডাকঘর ও হ্যাঙ্গারের মাঝামাঝি স্থানে এবং ৮ নম্বর গেটের পাশে অবস্থিত। সামনে খোলা জায়গা থাকায় বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের এলাকা থেকেও ঘন কালো ধোঁয়া দেখা যায়।

আগুনের কারণে বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বিমানবন্দরে সব ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিমানবন্দরে থাকা উড়োজাহাজগুলো নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয়।

শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে সাধারণত তুলনামূলক কম ওজনের যন্ত্রপাতি, পচনশীল পণ্য ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী আমদানি হয়। এ ছাড়া পোশাক খাতসহ বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহারের জন্য নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থও আসে। বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটটি হ্যাঙ্গার গেট নামে পরিচিত। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আগুনের সূত্রপাত আমদানি কার্গো কমপ্লেক্স ভবনের তিনটি গেটের মধ্যে ২ নম্বর গেটের কুরিয়ার শাখা থেকে হয়েছে।

বিমানবন্দরে উপস্থিত বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানান, বেলা ২টা ২০ মিনিটের দিকে অ্যালার্ম (সংকেত) বেজে ওঠে। এতে আমদানি কার্গো কমপ্লেক্স থেকে সব কর্মী দ্রুত বেরিয়ে আসেন। কর্মীদের অভিযোগ, ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো অনুমতিজনিত জটিলতার কারণে ৮ নম্বর ফটকে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল। এই সময়েই আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। তখন ওই কমপ্লেক্সের সামনে উড়োজাহাজ পার্কিংয়ে থাকা উড়োজাহাজগুলো সরিয়ে ফাঁকা করা হয়।

খবর ছড়িয়ে পড়লে কার্গো ভিলেজের বাইরে উৎসুক জনতা ভিড় করে। মাইকিং করে বিমানবাহিনী সবাইকে সরে যেতে অনুরোধ জানায়। বিমানবন্দরে প্রবেশের পথগুলো বন্ধ রাখা হয়। এতে উত্তরামুখী সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, আমদানি কার্গো কমপ্লেক্স ভবনে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্য সংরক্ষণ করা হয়। ১ নম্বর গেট বা গেট ‘এ’ কমার্শিয়াল গেট নামে পরিচিত, যেখানে কেমিক্যাল, কসমেটিকস ও ব্যাগেজ রাখা হয়। গেট ‘বি’-তে গার্মেন্টস পণ্য এবং গেট ‘সি’-তে ইলেকট্রনিকস ও শিল্প মেশিন রাখা হয়। এসব পণ্য সাধারণত ২৪ থেকে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ভবনে থাকে। এরপর আমদানিকারকেরা ছাড়িয়ে নেন।

বিমানবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম ভূঁইয়া মিঠু সাংবাদিকদের জানান, শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বেলা ২টা পর্যন্ত কার্গো ভিলেজে নিয়মিত কাজ চলে। অনেক পণ্য জমে ছিল, যেগুলো রোববার ছাড়িয়ে নেওয়ার কথা ছিল। তাই দুপুরেও শ্রমিক, আনসারসহ অনেকে ছিলেন। আগুন লাগার পর সবাইকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, কুরিয়ার গুদামের পাশেই রাসায়নিকের গুদাম রয়েছে। পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্পের জন্য আমদানি করা রাসায়নিক সেখানে মজুত ছিল।

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া অফিসার তালহা বিন জসিম জানান, বেলা সোয়া ২টার দিকে তাঁরা আগুন লাগার খবর পান। ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, রাত ৯টা ১৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নেভাতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনীর দুটি ফায়ার ইউনিট এবং নৌবাহিনীও কাজ করে। দুই প্লাটুন বিজিবিও মাঠে ছিল। আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুজন ও আনসারের ২২ জন সদস্য আহত হয়েছেন।

সন্ধ্যার পর ৮ নম্বর ফটক দিয়ে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স বের হতে দেখা যায়। ফটকের সামনে থেকে সংবাদমাধ্যমকর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে দূরে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

সন্ধ্যার পর কার্গো ভিলেজ এলাকায় যান অন্তর্বর্তী সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখনো যথেষ্ট আগুন রয়েছে। আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে বিমানবন্দর চালু করা। বিমানবন্দরের চলমান কার্যক্রম কীভাবে বজায় রাখা যাবে, সে বিষয়ে আমরা পদ্ধতিগতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছি।’ তিনি জানান, আগুন লেগেছে আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে, তবে রপ্তানি কার্গো কমপ্লেক্স নিরাপদ রয়েছে। আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তদন্ত করা হবে এবং তথ্যের জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। তদন্তের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে।

উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা :

আগুন লাগার পর বেলা সাড়ে ৩টা থেকে টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব উড়োজাহাজ ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। এ সময় নয়টি ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করতে না পেরে বিকল্প হিসেবে আটটি ফ্লাইট চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এবং একটি ফ্লাইট সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

বিকেলে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ বলেন, কার্গো ভিলেজে আগুন লাগার পর উড়োজাহাজ ওঠানামা স্থগিত রাখা হয়েছে। রাত ৯টা থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট কার্যক্রম আবার চালু করা হয়।

এদিকে ক্ষতি নিরূপণের জন্য কাস্টমস আইআরডির যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

 

  • আগুন
  • কার্গো ভিলেজ
  • বিমানবন্দর
  • ভয়াবহ
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।