বিয়াম ভবনের বিস্ফোরণ পরিকল্পিত নাশকতা, সন্দেহভাজনের ছবি প্রকাশ – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে বিসিএস প্রশাসন কল্যাণ সমিতির (বিয়াম ফাউন্ডেশন) ভবনের একটি কক্ষে “বিস্ফোরণের” ঘটনাকে পরিকল্পিত নাশকতা বলে আখ্যা দিয়েছে সমিতি।  এই নাশকতার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।

প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি এবিএম আব্দুস সাত্তারের সাক্ষরিত এক সংবাদ রোববার (২ মার্চ) বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে কর্মরত এবং সাবেক সদস্যদের আবাসিক সমস্যাসহ অন্যান্য আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নকল্পে ২০০৭ সালে বিসিএস (প্রশাসন) কল্যান বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড গঠন করা হয়েছে। ৬৩, নিউ ইস্কাটনের বিয়াম ফাউন্ডেশন ভবনের ৫০৪-৫০৭ নম্বর কক্ষ সমিতির আফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত অনুমান সোয়া ৩টায় সমিতির বিয়াম ভবনস্থ ৫০৪ নম্বর কক্ষে প্রচন্ড শব্দসহ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ৫০৪ নম্বর কক্ষে রক্ষিত সমিতির দলিলপত্রাদি, নামজারী সংক্রান্ত কাগজপত্রাদি, ব্যাংক হিসাবসমূহের চেক বহি, এফডিআর, বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে সমিতির জমি ক্রয় সংক্রান্ত ৪টি দ্বি-পাক্ষিক চুক্তিপত্র, ভূমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রাপ্ত পে-অর্ডারসমূহ, রেজিস্টারাদি, ৪টি কম্পিউটার, ৪টি প্রিন্টার, ১টি ফটোকপিয়ার মেশিন, ২টি স্ক্যানার, আসবাবপত্র, কক্ষের এসি, দরজা জানালার কাঠ ও থাইগ্লাস ইত্যাদি পুড়ে ভস্মীভূত ও চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, এ ঘটনার ৫০৭ নম্বর কক্ষে অবস্থানরত অফিস সহায়ক মো. আব্দুল মালেকের অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ বিয়াম ফাউন্ডেশন ভবনের উত্তর দিকের রান্নঘরের পাশে মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এই দুর্ঘটনায় ড্রাইভার ফারুক অগ্নিদগ্ধ হন। অগ্নিদগ্ধ ড্রাইভারকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে এবং নিহত অফিস সহায়ক মো. আব্দুল মালেকের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত শেষে বিয়াম ফাউন্ডেশন ভবনের মাঠে ২৮শে ফেব্রুয়ারি বিকাল সোয়া ৪টায় জানাজা শেষে তার লাশ গ্রামের বাড়ি বাউফল উপজেলার কালিশুরিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি আব্দুস সাত্তার বিবৃতিতে বলেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি সকালে সমিতির সম্পাদকের মাধ্যমে অবহিত হয়ে আমি তাৎক্ষণিকভাবে ডিবি প্রধান জনাব রেজাউর করিম মল্লিকসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলি এবং ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য, মহাপরিচালক, বিয়ামসহ অন্যান্যকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হাতিরঝিল থানার ওসি, ডিজি বিয়াম, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, ঢাকা জেলা প্রশাসকসহ সমিতির নির্বাহী কমিটির সদস্যদের নিয়ে সংগৃহীত সিসিটিভি ফুটেজ অবলোকন করি।

সিসিটিভির সংগৃহীত ফুটেজে দেখা যায়, ২৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত অনুমান আড়াইটার দিকে মাথায় ক্যাপ, মুখে মাস্ক, পায়ে স্যান্ডেল পরিহিত অবস্থায় মোজা পরা ও হাতে হ্যান্ড গ্লাভস পরা অনুমান ২৫-৩০ বছর বয়সী এক সন্দেহভাজন যুবক বিয়াম ভবন মাঠের পশ্চিম দিক থেকে এসে সিঁড়ি দিয়ে পঞ্চম তলায় চলে যায় এবং ঐ তলার সিসিটিভি বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ পরে ৫০৪ নম্বর কক্ষে প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পাওয়া যায়।

কয়েক মুহূর্ত পর উক্ত ব্যক্তি দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে তৃতীয় তলায় একটি খোলা কক্ষে প্রবেশ করে এবং সেখানে সে প্রায় এক ঘন্টা অবস্থান করে নিরাপদে বিয়াম ভবন ত্যাগ করে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে প্রতীয়মান হয় যে, ইহা একটি পরিকল্পিত নাশকতার ঘটনা। আমরা এই নাশকতার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভপ্রকাশ করছি এবং দ্রুত দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারপূর্বক আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

এর আগে, নিহত অফিস সহায়ক মো. আব্দুল মালেকের ছোট ভাই সোহেল খান গণমাধ্যমকে জানান, তার বড় ভাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক পদে চাকরি করতেন এবং রাতে অফিসেই ঘুমাতেন। তিনি ৫০৪ নম্বর কক্ষে থাকলেও ওইদিন কেন তিনি ৪০৭ নম্বর কক্ষে ছিলেন জানেন না। এ ঘটনাকে তিনি রহস্যজনক বলে উল্লেখ করেছেন।

এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাক্ষরিত বিবৃতিতে বিয়াম ভবনের বিস্ফোরণকে বোমা হামলা উল্লেখ করে হতাহতদের জন্য শোক ও সমবেদনা জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মির্জা ফখরুল বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে নিউ ইস্কাটন রোডস্থ বিসিএস প্রশাসনের কল্যাণ সমিতিতে বোমা হামলার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি। এ ধরনের হামলা প্রমাণ করে যে, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কত অবনতি ঘটেছে। দুষ্কৃতিকারীরা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ নৈরাজ্যের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। এ ধরনের হামলা এবং হতাহতের ঘটনা সেই অপতৎপরতারই বহিঃপ্রকাশ। এসব দুষ্কৃতিকারীদের কঠোর হস্তে দমনের বিকল্প নেই।

কিন্তু পরবর্তীতে রহস্যজনক কারণে বোমা হামলাকে ‘এসি বিস্ফোরণ’ আখ্যা দিয়ে বিবৃতি প্রত্যাহার করে নেয় বিএনপি। তবে আজ বিয়াম ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবিএম আব্দুস সাত্তারের বিবৃতি এবং সম্বলিত সিসিটিভি ফুটেজ থেকে প্রাপ্ত সন্দেহভাজন যুবকের ছবি ‘এসি বিস্ফোরণ’ কিংবা বোমা বিস্ফোরণ রহস্যকে আরও ঘনীভূত করেছে।

বিয়াম ফাউন্ডেশনের বিবৃতির পর এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

  • ছবি প্রকাশ
  • পরিকল্পিত নাশকতা
  • বিয়াম ভবন
  • বিস্ফোরণ
  • সন্দেহভাজন
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।