বেরোবির ৩ বিভাগের সংঘর্ষ, নিলয়ের চোখে আলো না ফেরার আশঙ্কা – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) তিন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী নিলয় সরকার। বর্তমানে তার চোখে আলো ফেরার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

‎চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নিলয়ের ডান চোখে মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। নিলয়ের চোখে সেলাই করতে হবে। অপারেশন করলেও ক্ষতিগ্রস্ত চোখে দৃষ্টিশক্তি ফেরার সম্ভাবনা মাত্র এক শতাংশ। ঝাপসা দেখার সম্ভাবনা আছে, কিন্তু পুরোপুরি দেখার নয়। আর অপারেশন না করলে ভালো চোখেও ভবিষ্যতে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ।

জানা যায়, ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টে মার্কেটিং বনাম পরিসংখ্যান বিভাগের খেলায় মার্কেটিং বিভাগের শাহরিয়ার অপু ও পরিসংখ্যান বিভাগের মারুফুজ্জামান জনির মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে উভয়কে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হয়।

এর জের ধরে ১২ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পরিসংখ্যান বিভাগের জনি ও তার সহযোগী নাফিসসহ চার-পাঁচজন মিলে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার অপু ও তার বন্ধু রোহান সরকারের ওপর চকবাজারে অতর্কিত হামলা চালায়। তারা সেখান থেকে পালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ও পার্কের মোড়ে আশ্রয় নেয়। আবার কিছুক্ষণ পর পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা দেশীয় অস্ত্র (লাঠি ও স্টাম্প) হাতে নিয়ে আবারও আক্রমণের উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসে। ‎এ সময় আশেপাশে থেকে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরাও এগিয়ে আসে এবং দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

তখন দুজন শিক্ষার্থী আহত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে আত্মরক্ষায় একাডেমি ভবন-৩ এর সমাজবিজ্ঞান বিভাগ ও মার্কেটিং বিভাগের কক্ষে আশ্রয় নেয় তারা। এ সময় পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানালার কাচ ভাঙে ও টয়লেটে দরজা ভাঙে। ওই জানালার কাচের টুকরো নিলয়ের চোখে লেগে গুরুতর জখম হয়।

ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. ফেরদৌস রহমান, রেজিস্ট্রার ড. হারুন অর রশীদ এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. ইলিয়াস প্রামাণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে তখনো একাডেমিক ভবন-৩-এ মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ করে বাহির অবস্থান করে পরিসংখ্যান ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

নিলয় সরকার চোখে গুরুতর আহত অবস্থায় তিন ঘণ্টা পরে যখন তার অবরুদ্ধ বন্ধুরা চোখের ছবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করলে প্রশাসন বিষয়টি জানতে পারে এবং তখন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।

ঘটনার পর রাত ২টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি বৈঠক করে শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মার্কেটিং বিভাগের আট শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী।

বহিষ্কৃতরা হলেন- ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাফায়েত শুভ, শাহরিয়ার অপু, সজিব, সৌরভ, নাজমুজ সাকিব, রোহান সরকার, জিহাদ এবং ১৪তম ব্যাচের আশরাফুল। বহিষ্কার ঘোষণা আসার পর পর অবরোধ থেকে সরে আসেন পরিসংখ্যান ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এবং এরপর অবরুদ্ধ শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসেন।

এদিকে ৮ জনকে বহিষ্কার করার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা সৃষ্টি হয়। নেটিজেন ও শিক্ষার্থীরা মনে করেন অপরাধের তুলনায় এই শাস্তি অতিরিক্ত হয়ে গেছে। তাদের দাবি শাস্তি যেন পূর্ণ বিবেচনা করা হয়। এবং উভয় পক্ষকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতা হয়।

‎এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও তদন্ত কমিটিসদস্য সচিব ড. ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামীকাল গণশুনানির পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। ৮ জনের মধ্যে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেটা সাময়িক। ওদের মধ্যে যদি কারো দোষ না থাকে তাদের শাস্তি মওকুফ হবে। এখন তদন্ত করে যে সিদ্ধান্ত নেবে সবকিছু বিবেচনা করে নেওয়া হবে। আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে। পুরো ঘটনায় যারা যতটুকু অপরাধ করেছে সেই অনুযায়ী শাস্তি পাবে।’

‎তিনি অসুস্থ নিলয় সম্পর্কে বলেন, ‘নিলয়কে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগেই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে পাঠানোরও চিন্তা-ভাবনা চলছে।’

  • চোখ
  • নিলয়
  • বেরোবি
  • সংঘংর্ষ
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।