ভয়াবহ বিমান ট্র্যাজেটি, শোকে স্তব্ধ জাতি,  নিহত ২০ আহত ১৬৪ – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এ পর্যন্ত ২০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। এতে আহত হয়েছেন ১৭১ জন। সোমবার বিকেল ৫টার দিকে আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের তালিকা দেওয়া হয়। বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় আজ মঙ্গলবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শোক প্রকাশ করেছেন। এ দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন অনেকে।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ১. কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল: আহত ৮, নিহত নেই; জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে আহত ৭০, নিহত ২; সিএমএইচ-ঢাকায় আহত ১৪ ও নিহত ১১; কুর্মিটোলা জেনারেল হসপিটালে আহত নেই, নিহত ২; উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে আহত ১১ ও নিহত ২; উত্তরা আধুনিক হসপিটাল আহত ৬০ ও নিহত ১; উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল আহত ১, নিহত নেই। এর আগে দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমান বাহিনীর এফটি-৭ বিজেআই প্রশিক্ষণ বিমানটি উড্ডয়ন করে বলে জানায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

এর আগে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, এ ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক মুহাম্মদ জাহেদ কামাল। বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় আজ মঙ্গলবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

ক্লাস শেষে চলছিল কোচিং, ভেতরে ছিল ১৫০-১৬০ শিক্ষার্থী :

রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় ভবনটিতে আগুন ধরে যায় এবং দুর্ঘটনার সময় সেখানে কোচিং ক্লাস চলছিল বলে জানা গেছে, যেখানে প্রায় ১৫০ থেকে ১৬০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সোমবার দুপুরে মাইলস্টোন কলেজের একজন কর্মকর্তা এসব তথ্য জানান।

উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে উপস্থিত এ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে আমাদের কতজন শিক্ষার্থী এখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে— আমি তার খোঁজখবর নিতে এসেছি। যে ভবনটিতে বিমান বিধ্বস্ত হয় সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ক্লাস হতো। তবে, ক্লাস শেষ হওয়ার পর অর্থাৎ ছুটি হওয়ার পর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। তখন সেখানে কোচিংয়ের ক্লাস চলছিল। ভেতরে প্রায় ১০০ থেকে দেড়শ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। অনেকে হতাহত হয়েছেন।

মাইলস্টোন কলেজের সামনে উৎকণ্ঠিত অভিভাবকরা:

বেলা তখন ১টা ১৫-এর আশপাশে। রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দিনের ক্লাস শেষ। শিক্ষার্থীরা বের হওয়ার অপেক্ষায়। অনেকে বের হয়েও গেছে। স্কুলের হায়দার আলী ভবনেও একই অবস্থা। তবে কিছু শিক্ষার্থী শ্রেণিশিক্ষকের কাছে কোচিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। হঠাৎ বিকট শব্দ। কোনো কিছু বোঝার আগেই হায়দার আলী ভবনজুড়ে আগুন। চারদিকে চিৎকার চেঁচামেচি। পাশের চার, পাঁচ ও সাত নম্বর ভবনে কলেজের শিক্ষার্থীরাও শ্রেণিকক্ষে ছিল। তারা দৌড়ে এসে দেখছে হায়দার আলী দোতলা ভবনটি জ্বলছে। কিছু শিক্ষার্থী গায়ে আগুন নিয়ে বের হচ্ছে। কেউ কেউ ভবনের ভেতরে চিৎকার করছে। কিন্তু কেউ বের হতে পারছে না। তীব্র আগুনের জন্য কেউ তাদের উদ্ধারে এগিয়েও যেতে পারছে না।
বিমানবাহিনীর বিমানটি মাইলস্টোন কলেজের হায়দার আলী ভবনের প্রধান ফটকে আছড়ে পড়ে এবং নিচতলায় ভবনটির এক পাশ দিয়ে প্রবেশ করে আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। সরেজমিনে দেখা গেছে, দোতলা হায়দার আলী ভবনটি পশ্চিমমুখী। ভবনটির মাঝখানে প্রধান ফটক এবং দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। বিমানটি সোজা ফটকে আছড়ে পড়ে ভবনটিকে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও সেনাসদস্যরা বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে বিমানটির বিভিন্ন অংশ কেটে বের করছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, ভবনটির প্রধান ফটকে সব সময় স্কুল স্টাফরা বসে থাকেন, সিঁড়ির নিচে স্টাফদের কক্ষ রয়েছে। বিমানটি প্রধান ফটক ভেঙে কক্ষের ভেতরে ঢুকে যায়। আগুনের তীব্রতায় পুরো ভবন কালচে হয়ে গেছে। ভবনের সামনের গাছগুলো পুড়ে গেছে, উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন সেনাসদস্য আহতও হয়েছেন।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়েম জানায়, সে বেলা ১টা ১০ মিনিটের পর বিকট শব্দ শুনতে পায়। এ সময় তারা কলেজটির চার নম্বর ভবনের একটি শ্রেণিকক্ষে ছিল। দৌড়ে এসে দেখতে পায়, হায়দার আলী ভবনে আগুন জ্বলছে।

সায়েম জানায়, তারা কয়েকজন মিলে ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও আগুনের এত তীব্রতা বেশি ছিল যে, তারা কাছেও যেতে পারেনি। এ সময় দেখা যায়, কিছু শিক্ষার্থী গায়ে আগুন নিয়ে বের হয়ে এলেও কিছু শিক্ষার্থী ভবনের ভেতরে আটকা পড়ে।

এই শিক্ষার্থী বলে, বিমানটি ভবনের প্রধান ফটকের ভেতর ঢুকে যাওয়ায় ভেতরে থাকা শিক্ষার্থীরা (বেশির ভাগ) আর বের হতে পারেনি। কারণ, ভবনটির চারপাশে লোহার গ্রিল দিয়ে আটকানো। তাই নিচে যারা ছিল, তারা আর বের হতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিস আসার পর আগুন নেভানোর পর গ্রিল কেটে ও ছাদে মই দিয়ে উঠে তাদের উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

প্রত্যক্ষদর্শী আরেক শিক্ষার্থী ইমাম বলে, ভবনটিতে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়। স্কুল বেলা ১টার মধ্যে ছুটি হয়ে যায়। আজও ছুটি হয়েছিল। কিছু শিক্ষার্থী বের হয়ে গিয়েছিল, আর কিছু শিক্ষার্থী বের হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। অনেকে আবার স্যারদের কাছে কোচিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। তখনই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

মাইলস্টোন স্কুলের মাঠে ও প্রধান ফটকের সামনে অসংখ্য অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের খুঁজতে এসেছেন। সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকা রিপন নামের এক ব্যক্তি এই প্রতিবেদককে জানান, তাঁর ভাগনে স্কুলটির ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। ক্লাস শেষে তারা বের হওয়ার অপেক্ষায় ছিল—এমন সময় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। তাঁর চোখমুখে ও গলার স্বরে উৎকণ্ঠার ছাপ স্পষ্ট।

লাকি আক্তার নামের এক নারী জানালেন, তাঁর দুই সন্তান মাইলস্টোনে পড়ে। বড় ছেলে বের হয়ে আসতে পারলেও তাঁর ছোট ছেলে এখনো নিখোঁজ। ফেরদৌসী বেগম নামের এক নারী জানান, তিনি তাঁর মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছেন না। তাঁরা এতটাই উৎকণ্ঠিত যে, তাঁদের মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না। অশ্রুসজল চোখে তাঁরা অপেক্ষা করছেন, কখন তাঁদের নাড়িছেঁড়া ধন তাঁদের বুকে ফিরে আসবে।

এদিকে মাইলস্টোন কলেজের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, বিজিবি, রেড ক্রিসেন্ট, উত্তরার বিভিন্ন থানা-পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবীরাও কাজ করছেন।

আহত ব্যক্তিদের রাজধানীর চারটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কুর্মিটোলা জেনারেল হসপিটাল, জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিএমএইচ। সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে এই চার হাসপাতালে খবর নিতে বলেছে অভিভাবকদের।

বিমান দুর্ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি :

প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান। দুর্ঘটনার বিস্তারিত তথ্য তদন্ত সাপেক্ষে জানানো হবে বলেও জানানো হয়।

সোমবার আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, বিমান দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য ইতোমধ্যে বিমান বাহিনীর একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে সোমবার (২১ জুলাই) বেলা ১টা ৬ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলার বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির মুখোমুখি হয়। দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিমানটির বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাবার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতালা একটি ভবনে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে।

এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় বৈমানিকসহ ১৯ জন নিহত এবং ১৬৪ জন আহত হয়েছেন। আহত সবাইকে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারসহ অ্যাম্বুলেন্সের সহায়তায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং নিকটস্থ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্থানান্তর করা হচ্ছে।

আইএসপিআর আরও জানায়, অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গভীরভাবে মর্মাহত এবং হতাহতদের সর্বাত্মক চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতায় তৎপর রয়েছে। বিমান বাহিনী প্রধান সরকারি সফরে দেশের বাইরে থাকায়, সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন), বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ সহ সামরিক বাহিনীর এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব এবং ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এবং পরিস্থিতি উত্তরণের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে ।

একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা :

রাজধানীর দিয়াবাড়ী এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় আজ মঙ্গলবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রেস উইং জানিয়েছে, দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি সব সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশি মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
আহত নিহতদের জন্য দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

নিহতদের পরিচয় শনাক্ত না হলে ডিএনএ টেস্ট :

বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাবে, তাদের মরদেহ অতিসত্বর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর যাদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যাবে না তাদের মরদেহ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে পরবর্তীতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন। চিকিৎসা কাজ নির্বিঘ্নে করার স্বার্থে হাসপাতাল এলাকায় অহেতুক ভিড় না করার জন্য সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে।

রাষ্ট্রপতির শোক :

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। গতকাল সোমবার বিকালে এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।

এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় রাষ্ট্রপতি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টার শোক :

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক শোকবার্তায় বিষয়টি জানানো হয়।

বার্তায় বলা হয়, রাজধানীর দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজেআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। এই দুর্ঘটনায় বিমানসেনা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ অন্যান্যদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ।

প্রধান উপদেষ্টা আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালসহ সব কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ দেন।

সরকার দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করবে বলেও বার্তায় উল্লেখ করেন তিনি।

ঢাকার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় পাইলট আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ সায়েদুর রহমান।
তিনি জানান, পাইলটকে আহত অবস্থায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি সিএমএইচের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন।

প্রধান বিচারপতির শোক :

প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হয়ে ছাত্র-ছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

তিনি দুর্ঘটনায় নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। একইসঙ্গে তিনি এই দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।

সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, প্রধান বিচারপতি এরইমধ্যে সুপ্রিম কোর্ট এর রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসারত আহতদের খোঁজ খবর নেওয়ার এবং প্রয়োজনীয় সহযোগীতার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।

দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান তারেক রহমান :

বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে আজ সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, বিমান দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোকÑ আমি এই দাবি করছি।

বিবৃতিতে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারী শিক্ষার্থীদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনাসহ আহত ব্যক্তিদের সুস্থতা কামনা করেছেন তারেক রহমান।

বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানটির পাইলট নিহত

রাজধানীর উত্তরায় বিমান বাহিনীর বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর মারা গেছেন।
গতকাল সোমবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সম্মিলিতি সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যান তিনি। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছে দগ্ধরা :

উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৩৩ শিক্ষার্থী দগ্ধ হয়ে ঢাকা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছে। তাদের মধ্যে অতিমাত্রায় দগ্ধ আছে ১২ জন, ৭ জন আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। গতকাল সোমবার (২১ জুলাই) সন্ধায় জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডাক্তার শাওন বিন রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দগ্ধদের সবার বয়স ৯ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে আশরাফুল ইসলামের ১৫ ভাগ, রোহান ৫০ ভাগ, শ্রেয়া ৫ ভাগ, কাব্য ২০ ভাগ, চাঁন মিয়া ৪০ ভাগ, ইউশা ৬ ভাগ, মেহেরিন ৪ ভাগ, রুপি বড়ুয়া ৬ ভাগ, তাসমিয়া ৫ ভাগ, ইমন (জানা যায়নি), জয়না ৮ ভাগ, সায়েবা ৮ ভাগ, পায়েল ১০ ভাগ, কাফি ১০ ভাগ, মুনসুরা ৫ ভাগ, আলভিনা ৫ ভাগ, নিলয় ১৫ ভাগ, মাসুম ৬০ ভাগ, আয়েন ৬০ ভাগ, মাহতাব ৪০ ভাগ, আরিয়ান ৫৫ ভাগ, মকিন ৬২ ভাগ, আবির ৯০ ভাগ, আনিজন ১০০ ভাগ, নাজিয়া ৮০ ভাগ, মেহেরিন চৌধুরির শরীরের ১০০ ভাগ দগ্ধ হয়েছে।

এছাড়া আইসিইউতে আছে নাফিস, শামীম, শায়ান ইউসুফ, মাহিয়া, আফনান, ফাইয়াজ ও সামিয়া নামে আরও ৭ জন। তাদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

দুর্ঘটনার পরপর উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। উত্তরাসহ আশপাশের ৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হতাহতদের উদ্ধার করা শুরু করে। পরে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় বিজিবি ও সেনাবাহিনী। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে হতাহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।

 

  • আহত
  • জাতি
  • ট্র্যাজেটি
  • নিহত
  • বিমান
  • শোক
  • স্তব্ধ
  • মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।