নাজনীন লাকী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:০০ | আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৩:১০
ঢাকা: দেশে পাসপোর্ট তৈরিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন পদ্ধতি প্রথা শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। ১৯২০ সালের দিকে চালু হওয়া এ পদ্ধতি সময়ের পরিক্রমায় বাড়িয়েছে মানুষের হয়রানি আর ভোগান্তি। তাই দীর্ঘদিন থেকে এই পদ্ধতির বাতিল চেয়ে আসছিল ভুক্তভোগীরা। বিগত সরকারগুলো নানা উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত কোনোটাই আলোর মুখ দেখেনি। অবশেষে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের হাতেই অবসান হলো সেই ভোগান্তির। বাতিল হলো পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বাধ্যবাধকতা।
বিষয়টিকে বেশ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে পুলিশ ভেরিফিকেশন না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোনো ভিনদেশি নাগরিক বা রোহিঙ্গারা যেন পাসপোর্ট না পায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা বাংলানিউজবিডিহাবকে বলেন, ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন পদ্ধতির কারণে পাসপোর্ট করতে অনেক বেশি সময় লেগে যেত নাগরিকদের। পদ্ধতিটি বাদ দেওয়ায় জনগণের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ঘটাবে। এমনকি ভোগান্তিমুক্ত ভ্রমণ অধিকারও নিশ্চিত করবে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। তবে যেকোনো উদ্যোগ বা পদক্ষেপ পুরোপুরি নিরঙ্কুশ হয় না। কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই এ খাতে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তাদের এই পদক্ষেপের ঝুঁকিগুলো বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই পুলিশ ভেরিফিকেশন পদ্ধতি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে যারা বাংলাদেশি না, বা যারা পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার রাখে না, তারা যেন কোনোভাবেই পাসপোর্ট না পায়- সে বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। বিশেষ করে, রোহিঙ্গারা যেন কোনোভাবেই এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাসপোর্ট করতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজবিডিহাবকে বলেন, ‘এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। এতে নাগরিকদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কমে আসবে। বিষয়টি বেশ ইতিবাচক। তবে এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিকত্ব সনদ, জন্মনিবন্ধনের মতো পাসপোর্টও একজন নাগরিকের পরিচয়পত্র। বিভিন্ন দেশে শুধুমাত্র পাসপোর্টকেই নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে নাগরিকের পরিচয়পত্র দেওয়া হয় নানা প্রক্রিয়াতে। এর মাঝে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও জন্মনিবন্ধন দেওয়া হয় অনলাইনে। এসব পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়াগুলোতে যেন কোনো দুর্নীতি বা অপব্যবহার না হয়- সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে ভিনদেশি কেউ যেন দেশের নাগরিক হতে না পারে।’
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পাসপোর্টে যেহেতু পুলিশ ভেরিফিকেশন থাকছে না, তাই পাসপোর্ট অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সেইসঙ্গে এসব প্রক্রিয়ার কেউ যদি সামান্যতম অপব্যবহার করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে এই খাতে দুর্নীতি বা অপব্যবহার কমে আসবে। ফলে সরকারের উদ্যোগের সুফল পাবে জনগণ।’
বাংলানিউজবিডিহাব/এনএল/পিটিএম