মন্ত্রণালয় কখনো এমন বেকায়দায় পড়েনি : বাণিজ্য সচিব – BanglaNewsBDHub.com |

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo



যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নিয়ে বাংলাদেশের ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছে- বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগে কখনো এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েনি বলে মন্তব্য করে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কখনো এ ধরনের বেকায়দায় পড়েনি। এ ধরনের পাল্টা শুল্কের ইতিহাস নেই।

রোববার বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি ও টেলিযোগাযোগ-বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ছাড়াও ১১টি মন্ত্রণালয়ের সচিব এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে অর্থ, বাণিজ্য, খাদ্য, কৃষি, স্বাস্থ্য, তথ্য, আইসিটি, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারও বৈঠকে অংশ নেন।

সভা শেষে বাণিজ্য সচিব জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত চুক্তির ডকুমেন্টের প্রেক্ষাপটে এ সপ্তাহেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত পজিশন পেপার ইউএসটিআরে পাঠানো হবে। তার আগে তৃতীয় রাউন্ড তথা চূড়ান্ত নেগোসিয়েশনের জন্য মিটিংয়ের সময় চেয়ে বুধবার তাদের ই-মেইল করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা খুব শিগগিরই যেতে চাচ্ছি। কিন্তু বুধবার যুক্তরাষ্ট্র ই-মেইল করে আমাদের বলেছে যে, তাদের কাছ থেকে মিটিংয়ের সময় না নিয়ে যেতে মানা করেছে। তাদের তো অনেক দেশের সঙ্গেই মিটিং করতে করতে হচ্ছে। তাই তাদের প্রিপারেশন নিতে সময় লাগছে।

বাণিজ্য সচিব আরও বলেন, বাংলাদেশের মূল পজিশন পেপার আগেই পাঠানো হয়েছে। এখন চূড়ান্ত নেগোসিয়েশন শুরুর আগে আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিং করে আরও কিছু প্রস্তাবনাসহ অবস্থাপপত্র তৈরি করা হচ্ছে। এই খসড়া পজিশন পেপার এ সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর পর তাদের দেওয়া সময় অনুযায়ী মিটিংয়ে নেগোসিয়েশন করা হবে। নেগোসিয়েশনে চুক্তির বিভিন্ন শর্তে দু’পক্ষ সম্মত হলে খসড়া চুক্তি উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন ও আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে স্বাক্ষর করা হবে।

ইউএস ট্যারিফ নিয়ে গত ৪০ বছরে এমন সংকট দেখেননি বলে ব্যবসায়ীদের মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব বলেন, ১৯৪৯ সালের পর সারাবিশ্বে এ ধরণের পাল্টা শুল্ক কখনও আসেনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও কখনও এমন বেকায়দায় পড়েনি। এতদিন উন্নত দেশগুলো শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধা দিয়ে গরীব দেশগুলোকে সহায়তা করতো, এবার যুক্তরাষ্ট্র সেখানে রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করেছে।

তবে বৈঠকে অংশ নিয়েছেন দায়িত্বশীল এমন কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বৈঠকে মার্কিন বাণিজ্যে বাংলাদেশের শুল্কহার, নতুন প্রস্তাবনা ও শুল্কমুক্ত পণ্য তালিকার বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পেয়েছে। এছাড়া মার্কিন স্বার্থসংশ্লিষ্ট কৃষি, শিল্প, আইসিটি, প্রতিরক্ষা, নৌ, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য ইস্যুগুলো গুরুত্ব সহকারে পয়েন্ট টু পয়েন্ট আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, এরমধ্যে সরাসরি বাণিজ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো বৈঠক থেকেই চূড়ান্ত করা হয়। এছাড়া মার্কিন প্রত্যাশার অ-বাণিজ্য বিষয়ক কিছু ইস্যুও বাংলাদেশ ইতিবাচক ভাবে দেখছে। তবে এ ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কোনো জটিলতা তৈরি করবে না, এমন অ-বাণিজ্য ইস্যুগুলোই বিবেচনা করছে সরকার। আবার যেসব ইস্যুতে ভূ-রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে- সেগুলোর বিষয়ে অবস্থানপত্রে কোনো প্রস্তাবনা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। তবে একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে-দেশের স্বার্থের জলাঞ্জলি দিয়ে স্পর্শকাতর যেকোনো বিষয়ে আলোচনার টেবিলে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল একটি স্বাধীন স্বত্বা হিসেবে নেগোসিয়েশনে সব ধরনের সক্ষমতা দেখাবে। দেশটির সঙ্গে মতৈক্য না হওয়া বাকি ইস্যুগুলো ফের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধি-বিধান আলোচনার টেবিলে মোকাবেলা করবে।

দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশ যে অবস্থানপত্র তৈরি করেছে, মার্কিন প্রশাসন ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ এতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে সমতার বাণিজ্যকে জোর দিয়ে করণীয় সবকিছুই অবস্থানপত্রে রেখেছে বাংলাদেশ। তারই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে দেশটি থেকে প্রতিবছর সাত লাখ টন গম আমদানিতে এমওইউ করেছে সরকার। এছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দেশটি থেকে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তৈলবীজ, চিনি, বার্লি, এলএনজি, শিল্পের মূলধনই যন্ত্রপাতি, মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট, রাসায়নিক পণ্য, বোয়িং বিমান ও সামরিক সরঞ্জামাদি আমদানি বাড়াতে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি আমেরিকা যে পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি করবে, তা বাংলাদেশ উৎপাদন করলেও তার জিআই স্বীকৃতি হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের-এমন শর্তের বিষয়েও দরকষাকষিতে রাজি বাংলাদেশ। এছাড়া মেধাসত্ব সংরক্ষণ ও কপি রাইট আইন অনুসরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ইতিবাচকভাবেই দেখছে, যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়। একই সঙ্গে মার্কিন প্রত্যাশার সব পণ্যে বাংলাদেশ আরোপিত শুল্কহার শূন্য করাসহ বিভিন্ন স্তরে এই হার ন্যূনতম পর্যায়ে রেশনালাইজেশনের কথা বলেছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বিদ্যমান সব ধরনের অ-শুল্ক বাধাও দূর করার অঙ্গীকার করেছে।

সূত্র : সমকাল

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।