চিকিৎসক আমিনুর রহমান, ছবি : সংগৃহীত
গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তা এলাকার একটি ক্লিনিকে গত শনিবার চেম্বার করতে এসেছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসক আমিনুর রহমান। সন্ধ্যায় ঢাকায় ফেরার পথে একদল লোক তাকে প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে শুরু করে মারধর। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিবারের কাছ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেওয়ার পর ভোরে আমিনুরকে ফেলে চলে যায়।
অপহরণের শিকার আমিনুর রহমান টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কচুটি গ্রামের ইসমাইল হোসেনে ছেলে। তিনি ঢামেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক। পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানীর শনির আখড়া এলাকায়। সপ্তাহে এক দিন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তার লাইফ কেয়ার নামে একটি ক্লিনিকে চেম্বার করেন আমিনুর।
রোববার রাত ১১টা তিনি সমকালকে বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টার পর চেম্বার শেষ করে আমি মাওনা ফ্লাইওভারের দক্ষিণ দিকে মহাসড়কের পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এ সময় সিলভার কালারের একটি প্রাইভেটকার আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। চালক জানতে চান, আমি যাব কিনা? মাথা নেড়ে না সূচক জবাব দেওয়ার পরই আমার পেছন দিক থেকে এসে তিন যুবক জাপটে ধরে জোর করে প্রাইভেটকারে তুলে নেয়। মহাসড়ক দিয়ে ঢাকার দিকে গাড়ি দ্রুতগতিতে যেতে থাকে। আপনাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে বলতে বলতে তারা আমার দুই চোখ স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে ফেলে। বলে, টাকা দিলেই ছেড়ে দেব।’
তিনি বলেন, ‘আমার দুই হাঁটুতে তারা হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। আমি তখন চিৎকার করছিলাম। আমার কাছ থেকে স্ত্রীর মোবাইল নম্বর নিয়ে কল করে সেই চিৎকারের শব্দ শোনানো হয়। প্রথমে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে সেটা ৩ লাখ টাকায় নামে।’
ডা. আমিনুরের স্বজন সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন মিল্টন জানান, রাত ১১টার দিকে কয়েক দফায় বিকাশের মাধ্যমে অপহরণকারীদের কাছে ১ লাখ টাকা পাঠানো হয়। পরে আবার বাকি টাকার জন্য আমিনুরকে চাপ দিলে রাত ৩টার দিকে আরও ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ভোরে মহাসড়কের পাশে আহত অবস্থায় তাঁকে ফেলে চলে যায় অপহরণকারীরা। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা দুটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ ও দুটি ক্রেডিট কার্ড নিয়ে যায় তারা। সেখান থেকে আমিনুর বাসায় ফেরেন। পরে তাকে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
আমিনুর রহমান বলেন, ‘অপহরণকারীরা আমার সঙ্গে থাকা নগদ সাড়ে ৯ হাজার টাকাও নিয়ে নেয়। পরে গাজীপুরের হোতাপাড়া ও রাজেন্দ্রপুর এলাকা থেকে কিছু দূর ভেতরে আমাকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে চলে যায়। সোমবার মামলা করার জন্য শ্রীপুর থানায় যাব।’
শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, অপহরণের শিকার চিকিৎসক বাসায় ফিরেছেন। স্বজন এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে এ ঘটনায় রোববার পর্যন্ত কেউ মামলা করতে আসেনি।