মুজিববর্ষ উদযাপনে ১৯ কোটি টাকা লোপাট, বিসিবিতে দুদকের অভিযান

Featured Image
PC Timer Logo
Main Logo

তিনটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুপুরে দুদকের তিন সদস্যের একটি দল বিসিবি কার্যালয়ে যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা অভিযানের পর সংবাদ সম্মেলনে তিন অভিযোগ নিয়ে কথা বলেছেন তারা।

তিনটি অভিযোগ হলো- মুজিব শতবর্ষ উদযাপনে বড় ধরনের দুর্নীতি, বিপিএলের টিকিট বিক্রির অর্থ অসঙ্গতি ও তৃতীয় বিভাগ লিগ শুরু নিয়ে অসঙ্গতি। ২০২০-২১ সালে মুজিব শতবর্ষ উদযাপনে ১৯-২০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে বিসিবি কার্যালয়ে এসেছিলেন দুদকের তিন কর্মকর্তা। প্রায় দেড় ঘণ্টা অভিযানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক আল-আমিন। এদিকে, বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেছেন, বোর্ডের পক্ষ থেকে সব দুদককে সব ধরনের সহযোগীতা করা হবে।

২০২০-২১ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বৃহৎ আয়োজন করা হয়। সেই আয়োজনের শামিল হয়েছিল বিসিবিও। জাকজমকপূর্ণ কনসার্টসহ বর্ণিল আয়োজন হয়েছিল সেই সময়ে। সেই আয়োজনে বড় ধরনের আর্থিক গড়মিলের কথা বলেছেন দুদক কর্মকর্তা আল-আমিন।

তিনি বলেন, ‘মুজিব শতবর্ষের ব্যয়ের হিসেবে কিছু অস্বাভাবিকতা আছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো যাচাইবাছাই করে আমরা আমাদের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটে প্রতিবেদন দাখিল করব। সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।’

‘কনসার্টসহ যে আয়োজন হয়েছিল, সেখানে সব মিলিয়ে ২৫ কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। আমরা এই অভিযোগ পেয়েছি। তবে আসলে খরচ হয়েছে ৭ কোটি টাকার মতো। এখানে প্রায় ১৯ কোটি টাকা সরানো হয়েছে বা কিছু হয়েছে। এরকম অভিযোগ আমরা পেয়েছি। বিসিবির অর্থ বিভাগের কাছ থেকে কাগজপত্র চেয়েছি। কিছু কাগজ পর্যালোচনায় আমরা বুঝতে পেরেছি, এখানে প্রায় ১৯ কোটি টাকার হিসেবে অস্বাভাবিকতা আছে। এছাড়া টিকেট বিক্রির ২ কোটি টাকাও এখানে দেখানো হয়নি। তাই এখানে টাকা আত্মসাতের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। সব কাগজপত্র হাতে পেলে সুনির্দিষ্ট করে আমরা বলতে পারব।’- যোগ করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দুর্নীতি নিয়েও অভিযোগ আছে দুদকের কাছে। এবারের বিপিএল শেষে বর্তমান বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানান, এবার ১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। গত ৮ বিপিএলে টিকিট বিক্রি থেকে যতো টাকা দেখানো হয়েছিল এবার এক বিপিএলেই ততো টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে, বলা হয়েছিল। এই অসঙ্গতি নিয়েও তদন্ত করবে দুদক।

দুদকের সহকারী পরিচালক আল-আমিন বলেন, ‘আগে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ নিয়ে টিকেটের ব্যাপারে চুক্তি করা হতো। তারা টিকেট বিক্রি করে বিসিবিকে একটা অংশ দিত। গত ৩-৪ আসরে বিসিবি নিজ থেকে টিকেট বিক্রি করছে। যার প্রেক্ষিতে একাদশ আসরে আমরা দেখেছি, ১৩ কোটি টাকা আয় হয়েছে। আট বছরে যেখানে ১৫ কোটি, এক বছরেই ১৩ কোটি। রেকর্ডপত্র আমরা পেয়েছি। বিস্তারিত যাচাই করলেই বোঝা যাবে কী অসঙ্গতি এখানে।’

এছাড়া তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগ নিয়েও তদন্ত করবে দুদক। প্রায় ১০ বছর পর এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগ। আগে এই লিগ খেলার ফি ছিল ৭৫ হাজার টাকা। কিন্তু ২০১৪-১৫ মৌসুমে হুট করেই সেটা বাড়িয়ে করা হয় ৫ লাখ টাকা। যাতে লিগের দল সংখ্যা ক্রমেই কমতে থাকে। গত কয়েক বছরে ৫টির বেশি দল দেখা যায়নি এই লিগে।

এবার ফি কমিয়ে করা হয়েছে ১ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে কিছু শর্তও শিথিল করা হয়েছে। যার ফলে বাছাই লিগে অংশ নিয়েছে ৬০টি দল। এই প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা আছে কিনা তদন্ত করবে দুদক।

দুদকের সহকারী পরিচালক আল-আমিন বলেন, ‘তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগে এবার ৬০টি দল অংশ নিয়েছে। আগে ২-৩ বা সর্বোচ্চ ৪ দলের লিগ হতো। এখানে হয়তো কোনো কারণ আছে। আমরা কাগজপত্র সংগ্রহ করেছি, এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বা বোর্ডের কোনো প্রভাব ছিল কিনা দেখার জন্য। এমনিতেই বোঝা যাচ্ছে, আগে হয়তো অংশগ্রহণের স্বাধীনতা ছিল না, কোনো চাপ ছিল, যে কারণে দলগুলো আসত না। আমরা বিস্তারিত যাচাইবাছাই করে বুঝতে পারব এখানে কী অসঙ্গতি ছিল।’

banglanewsbdhub/এসএইচএস

দুদক
বিসিবি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।